শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


পরিবেশের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর পলিথিন কারখানা পুরোনো ঢাকা থেকে সরানোর কোন উদ্যোগ নেই বলে দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পুরোনো ঢাকায় চার শতাধিক অবৈধ কারখানায় দেদারছে  উৎপাদিত হচ্ছে পলিথিন। এদিকে নিয়মানুযায়ী পলিথিনের তৈরি সব ধরনের ব্যাগের উৎপাদন বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ হলেও অবাধে চলছে এর ব্যবহার। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ সারাদেশেই পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। বলা হচ্ছে, দামে সস্তা, সহজলভ্য ও ব্যবহারিক সুবিধার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই পলিথিন ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কাঁচাবাজার, মাছ-গোশত, বিপনি বিতান অভিজাত শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, ফুটপাথ সর্বত্রই পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে পলিথিন রাখঢাক করে ব্যবহার করতেন। কারণ, পুলিশ পলিথিন পেলে ধরে নিয়ে যেত। এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন প্রকাশ্যেই পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার করা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরও পলিথিনের বিষয়ে উদাসীন। মাঝে মধ্যে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পলিথিন বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও তা কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবৈধ অনেক কারখানার নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দেশে পলিথিনের  উৎপাদন অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই পলিথিনের বিরুদ্ধে জনমত গঠিত হয়। পলিথিন একটি অপচনশীল পণ্য। পলিথিনের কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ময়লা পানি উপচে পড়ে সয়লাব হয়ে যায় সড়ক। বাস্তবতার বিবেচনা থেকেই ২০০২ সালে ২৪ মাইগ্রেনের নিচে ও ২০০৮ সালে ৫০ মাইগ্রেনের নিচে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। সংশোধিত আইনে অবৈধ পলিথিন উৎপাদনকারীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া পলিথিন বাজারজাতে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে, সরকারি কোন কোন মহল এর উৎপাদন বিপণনের সাথে যুক্ত থাকার ফলে কার্যত আইন কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে । এর ফলে পলিথিনের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। পাট দিবসে সংশ্লিষ্টরা পাটের উন্নয়নের ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন। পাটের বিশ্ববাজার ধরে রাখতে নানা আলোচনাও শোনা গেছে। আজকের বাস্তবতা হচ্ছে পাটের লম্বা ফাইবার এখন বিশ্বের দামি দামি গাড়ীর উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বে পাটের যখন কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন আমরা  পলিথিনকে কোন না কোনভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছি। অবৈধ পলিথিনের উৎপাদন বহাল রাখার ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বিষিয়ে তুলছে ঢাকার পরিবেশ। অবৈধ কারখানার সিংহভাগই গড়ে উঠেছে পুরোনো জরাজীর্ণ আবাসিক ভবন বা বাসা-বাড়ীতে। এসব কারখানার অধিকাংশই চলছে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, পলিথিন উৎপাদনে প্রভাবশালীরা জড়িত বলে অভিযানে গেলে বাধা আসে। অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ কিংবা র‌্যাব সদস্য চেয়ে রিকুইজিশন দিলেও পাওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, অবৈধ কারখানা বন্ধের জন্য অনেকবার অভিযানের পরও  কোন কাজ হয়নি ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কোন কোন মহলের ইন্ধনেই পলিথিনের উৎপাদন বিপণন বহাল রয়েছে। আইনে নিষিদ্ধ থাকার পরেও কিভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এটাও বোধগম্য নয় কেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান পরিচালনায় পাওয়া যাচ্ছে না। এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, উচ্ছেদের পরও নিষিদ্ধ পলিথিনের  উৎপাদন বহাল থাকছে। ব্যাপরটি যদি শিল্প-বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই নিষিদ্ধ পলিথিনের সাথ যেসব উৎপাদক এবং শ্রমিকরা জড়িত তাদের বৈধ উৎপাদনে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এটা নিশ্চিত যে পলিথিনের উৎপাদন বহাল রেখে তার ব্যবহার নিষিদ্ধকরা সম্ভব নয়। অন্যদিকে পাটের ব্যবহারও পর্যাপ্ত করা যাচ্ছে না। যেহেতু পলিথিন নিষিদ্ধ পণ্য সেকারণে এর উৎপাদন বিপণন বন্ধে কোন আপোষের সুযোগ নেই। নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন সম্পূর্ণরূপে বাজার থেকে উচ্ছেদ করা অপরিহার্য। সেই সাথে পরিবেশবান্ধব পাটজাত ব্যাগের উৎপাদন এবং বিপণন বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি গভীর বিবেচনায় এবং আন্তরিকতার সাথে ভেবে দেখবেন এবং সেই সাথে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন