শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ট্রানজিট চুক্তি করা ঠিক হবে না

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেই পুরনো আবদার ফের জানিয়েছে ভারত। কোনো শুল্ক বা মাশুল ছাড়াই সে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায়। এর আগে ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল, তার নিজ দেশ থেকে নিজ দেশে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে কোনো শুল্ক বা মাশুল দেবে না। শুধু প্রশাসনিক ফি দেবে। এছাড়া তার আর একটি আবদার ছিল, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে তার পণ্য রাখার আলাদা ইয়ার্ড-শেড দিতে হবে। বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বরাবরে পাঠানো ভারতের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) এর খসড়ায় এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রস্তাবিত ট্রানজিট চুক্তির খসড়ায় ওই দুটি সুবিধাই চেয়েছে ভারত। কথা ছিল, ভারত এসওপির যে খসড়া দিয়েছিল, বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তা যাচাই করে তার মতামত প্রদান করবে। ইতোমধ্যে সেই মতামত প্রদান সম্পন্ন হয়েছে কি না হলে, কি মতামত দেয়া হয়েছে, আমাদের জানা নেই। দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে নয়াদিল্লি থেকে দেয়া ট্রানজিট চুক্তির খসড়ায় ‘বিশেষায়িত ইয়ার্ড’ ও ‘বিনা ফি-চার্জ-টেরিফ বা মাশুল’ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। এমনকি এসওপি পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই চুক্তি সম্পাদন করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট বা করিডোর সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বাক্ষরের তোড়জোড় চলছে। ভারত চাইছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭-১০ এপ্রিলের নয়াদিল্লি সফরের সময় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে।
ট্রানজিটের নামে ভারতের একাংশ থেকে অপরাংশে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের সুবিধা চেয়ে আসছে ভারত দীর্ঘদিন ধরে। নামে ট্রানজিট হলেও এটা আসলে করিডোর। জাতীয় স্বার্থের সার্বিক বিবেচনায় ভারতকে এই করিডোর দিতে বাংলাদেশ কখনোই রাজি হয়নি এবং এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করেনি। বর্তমান সরকারের আমলে এ নিয়ে সমঝোতা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ভূমি ও দুই সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে। এই সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের ভূমি ও বন্দর ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে খাদ্য ও মালামাল পরিবহন করেছে কয়েক দফায়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে নৌপরিবহন সংক্রান্ত ট্রানজিট চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের মালামাল পরিবহন অব্যাহত আছে। নৌ-ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশের স্থল বন্দর ও ভূমি ব্যবহার করছে। সম্প্রতি আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ৬ ট্রাক লৌহজাত পণ্য আখাউড়া নিয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, বন্দর ব্যবহারসহ স্থল ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদিত হয়ে গেলে ভারতের বহু দিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তার এক অংশ থেকে অপরাংশে পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ নির্বাধ হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতকে করিডোর দেয়াতে বাংলাদেশের লাভ নেই, ষোলআনা লাভ হবে ভারতের। কারণ, ভারতের কাছ থেকে করিডোর সুবিধা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা বাংলাদেশের নেই। বহুপাক্ষিক ট্রানজিটের যে কথা বলা হয়, তাতেও দেখা গেছে, নেপালে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ ভারতের ভূমি ব্যবহারের সুবিধা পায়নি। পথে ট্রাক ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারত নিতে চায়, দিতে চায় না, এটা তার একটি বড় উদাহরণ।
কথিত ট্রানজিট চুক্তির খসড়ার বিস্তারিত আমরা জানি না। যতটুকু জানা গেছে, তাতে স্পষ্ট, সেখানে একমাত্র ভারতের সুবিধা ও স্বার্থকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এই খসড়া হুবহু চুক্তিতে পর্যবসিত হলে তা হবে একটি অসম চুক্তি। বন্দর ব্যবহারের জন্য কোনো প্রকার শুল্ক বা মাশুল না দেয়ার আবদার মামাবাড়ির আবদারের চেয়ে বেশি। এ ধরনের প্রস্তাব ভারত কিভাবে দিতে পারল সেটা একটা বড় বিস্ময়। ভারত কি তার বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশকে অনুরূপ সুবিধা দিতে সম্মত হবে? বিশেষ ইয়ার্ড-শেড সুবিধা দেবে কি? মনে হয় না, দেবে। প্রশ্ন হলো, ভারত যদি না দেয়, বাংলাদেশ দেবে কেন? দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কসমূহের ভারতকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেয়ার মতো সামর্থ্য আছে কি না সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও বিবেচ্য বিষয়। এ কথায় এর উত্তর, ভারতকে এই সুবিধা দেয়ার মতো সক্ষমতা বন্দর ও সড়কসমূহের নেই। বিশেষজ্ঞ ও বন্দর ব্যবহারকারীর মতে, দেশেরই আমদানি-রফতানি  পণ্য পরিবহনের চাহিদার ক্ষেত্রে বর্তমানে উভয় সমুদ্র বন্দর সক্ষমতার অনেক পেছনে আছে। সড়ক, রেল ও নৌপথের অবকাঠামোও অত্যন্ত সীমিত, দুর্বল ও অপর্যাপ্ত। এমতাবস্থায়, ভারতকে যদি তার চাওয়া সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অবকাঠামো সক্ষমতা বলতে গেলে তছনছ হয়ে যাবে। ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সম্পদ ক্ষতি হবে দেশের। এই অভিমতের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বিনা শুল্ক-মাশুল ও ইয়ার্ড-শেড সুবিধা দিয়ে কোনো চুক্তি করা যাবে না। বন্দর এবং সড়ক, রেল ও নৌপথের বিদ্যমান অবস্থায় কোনোরূপ ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদন হবে আত্মঘাতী। সুতরাং, চুক্তি করা থেকে বিরত থাকাই হবে দূরদর্শিতার পরিচায়ক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
sahed ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ৬:০৮ এএম says : 0
No defence deal with India. Bangladesh loose anything but not her freedom.
Total Reply(0)
humayun ৩ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:৩৮ এএম says : 0
we can do like Singapore.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন