সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : অর্থনীতির প্রাণ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এর নারায়ণগঞ্জ অংশে মেরামতের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ আর ঠিকাদারকে করতে হয়নি। কাজ না করেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ৪০ লাখ টাকা চেকে প্রদান করা হয়েছে। মেরামত কাজের সকল তথ্য শুধু কাগজেই রয়েছে। বাস্তবে তা করা হয়নি। চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক নিয়মিত মেরামত খাতে নারায়ণগঞ্জস সড়ক বিভাগের জন্য বরাদ্ধকৃত তহবিল থেকে কাজটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের তিন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ।
নারায়ণগঞ্জ সওজ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের এলটিএম (সীমিত দরপত্র পদ্ধতি) নং-০১/২০১৫-৫০১৬ এর মাধ্যমে মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৩ টাকার কাজ দেওয়া হয়। কাজের চুক্তিপত্র নং-৬১/২০১৫-২০১৬। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ১৯, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৭তম কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশের গর্ত, নিচু জায়গা এবং ঢেউ খেলানো অবস্থা মেরামত করে ডেন্স বিটুমিনাস সারফেসিংয়ের মাধ্যমে মজবুতি করনের জন্য কাজটির অনুমোদন দেওয়া হয় গত বছরের ২৭ অগাষ্ট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের স্থান চিহ্নিত করনের বর্তমান চেইনেজ অনুযায়ী কাজের ওই এলাকাগুলো সোনারগাঁয়ের হাবিবপুর, মেঘনা সেতু, গজারিয়া উপ-জেলার ছয়আনি ও বড় বালুয়াকান্দি বলে জানাগেছে। গত ২৯ অক্টোবর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি শেষ করতে সময় দেওয়া হয় ৩০ দিন । কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কিংবা এর পরও ওইসব এলাকায় কোন কাজ করতে দেখেনি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
এদিকে সূত্রে আরো জানাগেছে, কাজের তদারকি ও বিল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা ভিটিকান্দি সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারিক হোসেন গত ৪ জানুয়ারী ওই কাজের ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৫২ টাকার বিল পরিমাপ বহিতে রেকর্ড করেন । ওই দিনই বিল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা ওই উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির আলম তাতে স্বাক্ষর করেন । এরপর গত ১৩ জানুয়ারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ লাখ টাকার চেক দেয় নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী এ,কে সামছউদ্দিন আহাম্মদ আলোচনা করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চেক প্রদান করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে অপর এক সূত্রে জানাগেছে, মহাসড়কের ১৯তম কিলোমিটারে কাজ দেখিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারিক হোসেন যে বিল রেকর্ড করেছেন সেই এলাকাটির তত্বাবধানকারী তিনি নন। অফিস রেকর্ড অনুযায়ী মহাসড়কের ওই অংশের তত্বাবধানকারী অন্য একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়ার সময়ও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে । গোপণীয় ভাবে কাজটি দেওয়ার জন্য কাজের বিজ্ঞাপনটি একটি আন্ডাগ্রাউন্ড পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। দরপত্রে প্রতিযোগীতাকারী হিসেবে মোট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে না জানিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে দরপত্র দাখিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের একটির মালিক ও অপরটির পরিচালনাকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা ওই দরপত্রে অংশ গ্রহণ করিনি । যদি সেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে অংশ গ্রহণ দেখানো হয়ে থাকে তাহলে সেটি জাল।
এসব অনিয়মের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারিক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে বড় সাহেব ( নির্বাহী প্রকৌশলী ) ভাল জানেন ।
উপ-বিভাগী প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারী নম্বরের একাধিক বার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবরে বিভিন্ন কাজের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য,এরআগে চলতি অর্থবছরে ঢাকা বাইপাস মহাসড়কে মেরামত কাজ না করেই সাগর ট্রেডার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ৬০ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ২ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে বলেছিলেন, অভিযোগের তদন্ত করে কঠিন ব্যবস্থা নিবেন তিনি। মন্ত্রীর ওই ঘোষনার দুই দিনের মাথায় কাজ না করেই আবারো প্রায় কোটি টাকার ওই বিল দেওয়া হয়। এতে সওজ এর স্থানীয় ঠিকাদার,কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে প্রকৌশলীদের একটি সিন্ডিকেট একের পর এক এরকম দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন