আমির সোহেল : আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যায় টইটম্বুর বাংলাদেশ। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এই উন্নয়নশীল দেশে প্রকট আকারে প্রধান সমস্যা হতে চলছে বেকারত্ব। দিন দিন তীব্র গতিতে বাড়ছে শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবসমাজ। একটা চাকরির প্রত্যাশায় বেকারত্ব নামক অভিশাপ হতে বের হওয়ার জন্য তারা দিশেহারা হয়ে ছুটছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ, অবকাঠামোগত অনুন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, কারিগরি শিক্ষার অভাব, নিয়োগে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ইত্যাদির কারণে দিন দিন বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তারাও আছেন।
আর এই উচ্চশিক্ষিত বেকার কয়েকজনের মতামত নিয়ে এই লেখা তৈরি করা হল। জানতে চেয়েছি নতুন বছরে তাদের কি কি প্রত্যাশা? তাদের মতামত তুলে ধরছি...
আমরা মাঝে মধ্যে বেকারদের জন্য নানান আশার বেলুন ফুলাতে শুনি। কিন্তু বাস্তবে তার দেখা পাই না। বেকারদের জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে শুনেছিলাম। সেখানে বেকারদের কর্মসংস্থান আর উন্নয়ন নিয়ে ভাবা হবে, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, বেকার ভাতা দেয়া হবে এমনি কত কি আরও শুনি! শুনতে বড় ভালো লাগে! কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব আছে কি? দেশে এ ধরনের অনেক শুভ উদ্যোগই আর্থিক আনুকূল্য, প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও সহযোগিতার অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান নামে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সরকারি গঠনমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূরিকরণ এ মুহূর্তে নতুন বছরে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা।
অলি উল্যাহ রাব্বানী
এমএসএস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের যথার্থ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। শুধুমাত্র কিছু কর্মসূচির মৌখিক ও লোক দেখানো ঘোষণা দিলেই চলবে না। যথাযথ সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের যৌক্তিক প্রথা তালাস করে সে মোতাবেক কাজও করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, স্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানামুখী কর্মসূচি নিতে হবে! বিনা সুদে লোন দিতে হবে। যাতে বেকাররা উদ্যোক্তা হতে পারে। শিক্ষিত বেকারেরা আর যাতে হতাশায় না ভোগে, অসামাজিক কাজে না জড়ায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের বেকার জনগোষ্ঠী যদি সম্পদে পরিণত না হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর হবে না।
সামছ পাটোয়ারী
এমএসএস, চট্টগ্রাম কলেজ।
বেকারত্ব দূর করার জন্য সরকারের যেসব দিকে নজর দেয়া উচিত- শ্রমিকের অদক্ষতা দূর করা। সুষ্ঠু পরিকল্পনার গ্রহণ করা। শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসার করা। যুগোপযোগী কারিগরি জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা। কৃষি, মৎস্য, পশুপালন ও পোল্ট্রির মত লাভজনক খাতে শিক্ষিত লোকের কাজে অনীহা দূর করাÑ এসব করলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব আর এটাই প্রত্যাশা করি।
মাহবুবা ইয়াসমিন (পিয়া)
এমএসএস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বেকার এই শব্দটার মধ্যে কত যে কষ্ট লুকিয়ে থাকে। বেকার ছাড়া কেউ বোঝে না। এখন এই বেকারত্বের হার কমানোর জন্য দেশের ভেতর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। বর্তমানে জিডিপিতে বিনিয়োগের অবদান ২৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে বেকারত্বের হার কমাতে হলে এই হার ৩২ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়লে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ, কমবে বেকারত্বের হার। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, উন্নত প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধন একান্ত প্রয়োজন। আমার প্রত্যাশা সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে।
ওমর ফারুক রাহী
এমএসএস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের দেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এদেশে অনেক শিক্ষিত বেকার আছে। নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই ধারদেনা করে পড়াশুনা করে। কেউ সম্পদ বন্ধক বা বিক্রি করে পড়াশুনা শেষ করে। এরপর যদি চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন কাটায় সেটা কতটা কষ্টকর ভুক্তভোগীই জানেন। এজন্য সরকারী-বেসরকারী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ভাইভাসহ চাকরির সকল পরীক্ষা নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে দেয়ার ব্যবস্থা করা। যেখানে বেকারদের পক্ষে চাকরিতে আবেদন করার টাকা সংগ্রহ করাই মুশকিল, সেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা খুবই জুলুম। সকল চাকরির আবেদন ফি-ও বন্ধ করা দরকার। এছাড়া কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা প্রয়োজন। নতুন বছরে কর্তৃপক্ষের বেকারত্ব দূর করার যথার্থ ভূমিকা রাখুক এটাই আমার প্রত্যাশা!
হোসাইন রিওন
বিএ, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে’- প্রবাদটির বাস্তবতা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দিন দিন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ছে না চাকরির বাজার। শৈশব থেকে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হলেও পূরণ হচ্ছে না সে স্বপ্ন। অনেক কষ্ট, সাধনা আর অনেক টাকা খরচের পর উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বেকার হয়ে বসে থাকায় সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। কাজ না পেয়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার শ্রেণির সংখ্যা। এই মুহূর্তে একটা ভাল চাকরি পাওয়াই হল স্বপ্ন-প্রত্যাশা!
মীম আক্তার
বিএসএস, বেগম বদরুননেসা সরকারী মহিলা কলেজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন