শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভেজাল জ্বালানী তেল রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, দেদারছে মানহীন ভেজাল জ্বালানী তেল বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে। প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই এই ভেজাল তেলের ব্যবসা জমজমাট। এসব বন্ধে সাঁড়াশি কোন অভিযান নেই বললেই চলে। নামকাওয়াস্তে কিছু অভিযান চললেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ভেজাল তেল ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই এসব অভিযোগে বেশ কয়েকটি ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেছে বিএসটিআই। জ্বালানী তেল বাজারজাতে বিএসটিআইয়ের সনদ বাধ্যতামূলক হলেও তা নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে পরিবহন মালিকদের অভিযোগ হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে মানহীন ভেজাল জ্বালানী তেল বিক্রি করায় তা ব্যবহার করে গাড়ীর ইঞ্জিন নষ্ট ও বিকল হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে জানানো হলেও অদ্যাবধি ভেজাল  তেলবিক্রি বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে বিএসটিআইয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, জ্বালানী তেলের মান সনদ নেয়ার ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিপিসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
জ্বালানী তেল নিয়ে নানা তেলেসমাতির খবর নতুন নয়। মাপে কম দেয়া, নিম্ন মানের তেল দেয়া থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নানা অভিযোগ ফিলিং স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে। ভেজাল জ্বালানী তেলের বিষয়টিও অনেক পুরনো। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছেন, জ্বালানী তেল পরীক্ষা করে তাতে ভেজাল পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, ডিজেলে বিশুদ্ধতার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হলো এর সিটেন নাম্বার বা দাহ্যতার সময়। জাতীয় মান অনুযায়ী ডিজেলে সিটেন নাম্বার থাকার কথা সর্বোচ্চ  ৪৫। অথচ সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে ৫২ দশমিক ২০। শুধু সিটেন নাম্বারই নয়, ডিজেলের ১৪টি প্যারামিটার পরীক্ষা করে ১১টিতেই অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। একইভাবে পেট্রোলের সর্বোচ্চ বয়েলিং পয়েন্ট ২১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পরীক্ষায় পাওয়া গেছে ২৪৮ দশমিক ৭০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। পরীক্ষায় পেট্রোলের ১৪টি প্যারামিটারের মধ্যে সাতটিতে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এছাড়া অকটেনের মোট ১৩টি প্যারামিটার পরীক্ষা করে সাতটিতেই নেতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। বিএসটিআই সূত্রে বলা হয়েছে, জ্বালানী তেলের মান খারাপ হওয়ায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিএসটিআই জানিয়েছে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল  তিনটি জ্বালানী পণ্যই বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্য। বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন পণ্য তিনটির লাইসেন্স নিচ্ছে না। এ ছাড়া ১৩ টি প্রতিষ্ঠানও মানসনদ গহণ করছে না। তারা মান ছাড়াই  তেল বিক্রি করছে।
সরকারের বিভিন্ন মহল পরিবহন খাতে গ্যাসের পরিবর্তে জ্বালানী তেলের ব্যবহারকে পুনরায় উৎসাহিত করার পক্ষে কথা বলছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জ্বালানী তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে না। মাত্র ক’দিন আগেই প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখাগেছে, জ্বালানী তেলের ব্যবহার বাড়ছে। এই বাস্তবতায় জ্বালানী তেলে ভেজালের তথ্যপ্রমাণাদি গুরুতর  বিবেচনায় নেয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এসব তেল ব্যবহারে গাড়ীর মারাত্মক ক্ষতির অশঙ্কা রয়েছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে কেউ গাড়ীর ক্ষতি হোক তা চাওয়ার কারণ নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে  অভিযান পরিচালনায় কোন ক্ষেত্রে ছাড় পাবার সুযোগ রয়েছে। আর সেই সূত্র ধরেই জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত জ্বালানী তেল বাজারে আসছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর সাথে প্রভাবশালী কোন মহলের আন্তঃসম্পর্ক অথবা অবৈধ অর্থের লেনদেন থাকতে পারে। বিষয়টি কার্যত প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবেই যে ঘটছে বা ঘটতে পারেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই প্রবণতা চলতে দেয়ার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। যারা এই অসৎ ও অসাধু প্রবণতার সাথে যুক্ত, তাদের অনেককেই  ইতোমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও কেউ কেউ থাকতে পারে। যত শক্তিশালী বা ক্ষমতাবানই হোক না কেন আইন সবার জন্য সমান। কারণ যাই হোক সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে বাজারে ভেজাল জ্বালানী তেলের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। সংশ্লিষ্টমহল আন্তরিক হলে ভেজাল জ্বালনী তেল রোধ করা কোন কঠিন কাজ নয়। পরিবহনের সুরক্ষা এবং জ্বালানী তেলের মান রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক এবং উদ্যোগী হবেন এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন