শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নদী বাঁচানোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই জানা গিয়েছিল এবারো তিস্তার পানিচুক্তি হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ই ভারত থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সিলেটের হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ একর জমির উঠতি বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের লাখ লাখ কৃষক এখন তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা ও তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক এখন সেচের পানির সংকটে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের নদ-নদীগুলোতে পানিশূন্যতার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর করুণ পরিণতির চিত্র উঠে আসছে। নদ-নদীর অস্তিত্বের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্পর্কযুক্ত। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ হিসেবে নদীর পলি দিয়ে গড়া এবং নদ-নদীর পানিতে বেঁচে থাকা জীবপ্রকৃতি, প্রতিবেশ-পরিবেশ ও খাদ্যচক্র ধ্বংস হয়ে গেলে এ ভূমি শত শত মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সংস্থান ও বাসযোগ্যতা হারাবে। ভূ-প্রকৃতিগত কারণেই বাংলাদেশের নদ-নদী এর অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায়, একসময়ের প্রমত্তা তিস্তানদী এখন একটি শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। শীর্ণ খালের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুধুই ধু ধু বালুচর।
গতকাল সহযোগী আরেকটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের গঙ্গার পানিচুক্তি হলেও চুক্তি অনুসারে ফারাক্কা দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি দেয়া হচ্ছে না। পানিচুক্তির শুরু থেকেই ভারতের পক্ষ থেকে কখনো বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। নামকা ওয়াস্তে যৌথ নদী কমিশন থাকলেও ভারতের অনাগ্রহের কারণে বছরের পর বছর ধরে জেআরসি’র বৈঠক হয় না। পানিচুক্তি হলেও বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তি যেন ভারতের ইচ্ছাধীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নদী অববাহিকা এবং ভাটির দেশ হিসেবে যৌথ নদীর উপর বাংলাদেশের অধিকারের প্রতি রীতিমত অবজ্ঞা করা হচ্ছে। নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়া এবং বাংলাদেশের কোটি কোটি কৃষকের হাহাকার তাদের মধ্যে যেন কোন রেখাপাত ঘটায় না। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় গত তিনমাসে বাংলাদেশ ৫৬ হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে। এরই প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০টি নদীতে অস্বাভাবিক পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে বছরের পর বছর ধরে নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় সব নদ-নদীতেই পলি জমে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় সামান্য জোয়ারেই নদী অববাহিকায় প্লাবন দেখা দেয়। এর ফলে উজানের ঢলে নদী উপচে মওসুমি ফসলের বিস্তীর্ণ প্রান্তর তলিয়ে লাখো কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।
ভারতের সাথে বন্ধুত্বের পরীক্ষায় বাংলাদেশ ক্রমাগত একতরফা ছাড় দিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নৌবন্দর, স্থলবন্দর ও রেলপথে ট্রানজিট, করিডোর প্রায় বিনাশুল্কে ভারতকে দেয়া হয়েছে। এর আগেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন করতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবকাঠামো সক্ষমতা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ ও নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলোকেও আমলে নেয়া হয়নি। তবে গঙ্গা বা তিস্তার পানি ভারতের কাছে বাংলাদেশের কোন আবদারের বিষয় নয়। এটি বাংলাদেশের অগ্রগণ্য অধিকার। আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নদী আইন দ্বারা এ অধিকার সংরক্ষিত। এটি কোন বিনিময়যোগ্য অধিকার নয়। ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের উপর অপ্রয়োজনীয় চুক্তি চাপিয়ে দেয়া হলেও দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশকে পানিবঞ্চিত রেখে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোকে শুকিয়ে মারার এই ধ্বংসাত্মক খেলা বন্ধ করতেই হবে। সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় দুই লক্ষাধিক হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় আগামী মওসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র নেত্রকোনা জেলায় ফসলের ক্ষতি ৬৫০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারত পানির ন্যায্য অধিকারও দিচ্ছে না আবার গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের মতো বাংলাদেশের বিকল্প উদ্যোগেও বাধা দিচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে ভারত অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলছে। যথাশীঘ্র তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতেও ভারত প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। অন্যদিকে চুক্তির পরও পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার আধিপত্যবাদী নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। এ বিষয়ে এবং তিস্তার পানি বণ্টনে আর কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের জনগণ এখন ভারতের বন্ধুত্ব ও  সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায়। সেই সাথে নদ-নদীগুলোর দূষণ-দখল রোধ ও নাব্যতা পুনরুদ্ধারে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Selina ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ৫:১২ এএম says : 0
Let about 300 million eye's tear drop into 54 river for natural water flow .no division ,no distortion ,no double standard ....only absolute firm unity can save our beloved soil .
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন