শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মূর্তিটি সরিয়ে ফেলাই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রীক মূর্তি সরিয়ে (স্থানান্তর) নিতে বা ঢেকে দিতে প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার প্রধান বিচারপতিকে এ পরামর্শ দিয়েছেন বলে সোমবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই একথা জানিয়েছেন। আমরা এই পরামর্শকে অভিনন্দন জানাই। সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মন্ত্রী সভা  বৈঠকে  প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিচারপতিদের জন্য নব নির্মিত আবাসিক ভবনের উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির সাথে বিষয়টি নিয়ে তার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, সুপ্রিম কোর্টের সামনে যে গ্রীক ভাস্কর্য জাস্টিশিয়া তৈরি করেছেন এ জাস্টিশিয়া কোথায় পেয়েছেন? এ ভাস্কর্যে আবার শাড়ি পরিয়েছেন। যা পরা ছিল তাই পরান। দেখতেও তো সুন্দর না। আবার পরানো হয়েছে শাড়ি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন,  কাছেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। সেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। ওখান থেকে এ ভাস্কর্য দেখা যায়। হয় ওই  ভাস্কর্য ওখান থেকে সরিয়ে (স্থানান্তর) দেন, আর নাহলে ওই ভাস্কর্যকে ওই দিক থেকে আড়াল করে দেয়ার ব্যবস্থা করুন, যেন ঈদগাহ থেকে দেখা না যায়। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তি তথা গ্রীক দেবির ভাস্কর্য অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ভাস্কর্য অপসারণের ক্ষেত্রে কোন অজুহাত তৈরির  চেষ্টা দেশবাসী মেনে নেবে না। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরি বলেছেন, শত আলেমের  উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের যথাযথ মূল্য দিয়ে অবিলম্বে মূর্তি অপসারণ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। ন্যায়বিচারের প্রতীক। সাধারণ মানুষ যখন  ন্যায় বিচারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে, তখন সে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়। সুবিচার ন্যায়বিচার ধারণা মানুষ মূলত পেয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে। পরকালে বা শেষ বিচারের মিজানের ধারণাই হচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতীক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশ পথের মূল ভবনে এই প্রতীক দাঁড়িপাল্লা দীর্ঘদিন থেকেই ছিল। বর্তমানে সেটি নেই। এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশপথে স্থান পাচ্ছে আলোচ্য মূর্তি। যে কোন বিবেচনাতেই দেখলে এর স্পর্শকাতরতা  অনস্বীকার্য। অনেকদিন ধরে আলোচ্য ভাস্কর্যটি সেখানে স্থাপিত থাকলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন কওমী মাদ্রাসার আলেমগণ। এমূর্তি সরানোর ব্যাপারে আলেমদের দাবির প্রতি সহমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি বলেছেন, সত্যি বলতে কি আমি নিজেও এটা পছন্দ করি না। তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন, গ্রীক দেবি থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন, এটা কেন করা হলো, কারা করল,  কিভাবে আমি জানিনা। এরপরেই তিনি আলেমদের আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, ইতোমধ্যেই তিনি প্রধান বিচারপতিকে খবরটি দিয়েছেন এবং শিঘ্রই কথা বলবেন। দেখা যাচ্ছে  এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলেছেন এবং সেটি তিনি মন্ত্রী সভাকেও অবহিত করেছেন। একথা অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে, গ্রীক মিথের সাথে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের কোন বিন্দুমাত্র সম্পর্কও নেই। পৃথিবীর আদি আইনের উৎস হচ্ছে, হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে আল্লাহর লিখিতভাবে প্রেরিত ৮টি মূলনীতিমালা। তার গোত্র তার কাছে লিখিত বাণী চেয়েছিল বিধায় আল্লাহ তা প্রেরণ করেছিলেন। নানা বাস্তবতায় নানা মিথ বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটি দেশের মানুষ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকেই এটা বিবেচনা করে। একারণে ন্যায়বিচার প্রতীকেও তারতম্য রয়েছে। আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার সাথে গ্রীক ধারণার কোন মিল থাকার সুযোগই নেই। যারা পরকাল এবং শেষ বিচারের দিনে  মানুষের পাপ-পুণ্যের বিচারে যে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার করা হবে বলে বিশ্বাস করেন তারা দাঁড়িপাল্লাকেই ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে মনে করেন। সে বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন সে সূত্র ধরেই বলা যায়,  কিভাবে কেমন করে কাদের মাধ্যমে এটি স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা এবং তার বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেটি সত্যিই ভাববার রয়েছে।
একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের অনেক মৌলিক বিষয় নিয়ে কথা বলে জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে তার আমলে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই তিনি অনেক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। দেশের রাজনৈতিক  হয়রানি  মুক্তকরণেও  বর্তমান সময়ে উচ্চতর আদালতের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি সকল মহলের আস্থা অর্জনেও সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিমত থেকে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, আলোচ্য মূর্তি অপসারণে কোন আইনগত সমস্যা নেই বরং প্রশাসনিক নির্দেশেই সম্ভব। মূর্তি অপসারণ এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির ফলে বিষয়টি নিশ্চিত করাই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের  আওতাধীন হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। এটাও মনে রাখা দরকার ন্যায়বিচার চাইতে যাওয়ার প্রবেশ পথেই যদি সন্দেহ দানাবাঁধে তাহলে আস্থার ব্যাপারটিতে আঘাত আসে। একারণে কোন ইগো নয়, বরং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণই বাঞ্ছনীয়। সামগ্রিক বিবেচনায় এটা বলা যায়, আড়াল বা আবডাল নয়, মূর্তিটি সম্পূর্ণরূপে স্থানান্তর করা হবে সেটাই দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সাইদুর রহমান ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:২০ এএম says : 0
এমন কোন বক্তব্যদেওয়াটিক নয়
Total Reply(0)
মিলটন ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:৫১ এএম says : 0
..............র সাহস নেই মূর্তি সরাবার
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন