শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বিধান করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাস-মিনিবাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হবে না, ভাড়া কমে যাবেÑ এমন আশ্বাস দিয়ে মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিলেও সেই মালিকরাই এখন তা মানছে না। অন্যদিকে সিটিং সার্ভিস বন্ধে সরকার দৃঢ সংকল্প বলে বললেও এখন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা বলছেন। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন সিটিং সার্ভিসে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে, অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করতে হবে। একই দিন অন্য এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন বেসরকারি পরিবহন খাতের সাথে জড়িত অনেকেই খুব প্রভাবশালী। এদিকে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি অভিযোগ করেছে রুটে অধিকাংশ বাসে মাস্তান প্রকৃতির লোক রেখে যাত্রী সায়েস্তা চলছে। সংগঠনটি বলছে, বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে যাত্রীদের অপদস্থ করা হচ্ছে। যাত্রীভোগান্তি কমাতে জরুরিভিত্তিতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
নগরীতে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা এবং পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছে তাকে পরিকল্পিত নাটক না বলে উপায় নেই। সাধারণ যাত্রী ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের অভিযোগও অনুরূপ। তারা বলছেন, এই জনভোগান্তির নেপথ্যে রয়েছে মালিক-শ্রমিক সমিতির সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী নেতা ও সমর্থকরা। ৪ এপ্রিল মলিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। সে মোতাবেক ১৬ এপ্রিল থেকে যথারীতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। আইনগতভাবে সিটিং সার্ভিসের কোন বিধান না থাকা সত্তে¡ও কেন এবং কোন বাস্তবতায় সিটিং সার্ভিস চালু হয়েছিল তার নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। কার্যত যারা কিছুটা নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে চান তারাই কিছুটা বেশিভাড়া দিয়ে হলেও সিটিং সার্ভিসে যাতায়াতের পক্ষে ছিলেন। সে সময়ে সিটিং সার্ভিসের পরিবহনগুলো ছিল তুলনামূলকভাবে নতুন। ফলে যাত্রীদের কিছুটা হলেও সুবিধা হচ্ছিল। এধরনের পরিবহনে সময়ও বেচে যেত। এরপর সিটিং সার্ভিসের কোনো চিহ্নও দেখা যায়নি। এমন হয়ে পড়ে যে সিটিং সার্ভিসের অর্থই দাঁড়িয়েছিল যাত্রী প্রতারণা, ভোগান্তি। এসব গাড়ীতে না ছিল বসার মত অবস্থা, না ছিল যাত্রী সুবিধা। এনিয়ে কোন যাত্রী কথা বললে তাকে রীতিমত নাজেহাল হতে হতো। বাস্তবতার আলোকেই সিটিং সার্ভিস তথা নৈরাজ্যর বিপক্ষে ব্যাপক জনমত গঠিত হয়। সেকারণে সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন মহল থেকে অভিনন্দনও জাননো হয়েছে। বাস্তবে পরিস্থতি দাঁড়াল ভিন্নরূপ। দেখা গেল নামে সিটিং তুলে দিয়ে লোকালের নামে যত্রতত্র যাত্রী নেয়া আর ভাড়ার নৈরাজ্য বহাল থেকে যায়। বলাবাহুল্য, কোন ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণার কারণেই নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে মালিকদের পক্ষ থেকেই বিষয়টি এরূপ করা হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এতদিন সিটিং সার্ভিস আইনগতভাবে অবৈধ থাকলেও এখন তাকে বৈধতা প্রদানের ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে। সঙ্গত প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি এই বৈধতা পাবার জন্যই একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ নিয়ে মালিকপক্ষ হঠাৎ করেই সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? ব্যাপারটি যদি সেরকম হয় তাহলে আগামী দিনে যাত্রীদের কপালে দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ তথাকথিত সিটিং সার্ভিসের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে স্বল্পদূরত্বে গেলেও তাকে পূর্ণদূরত্বের ভাড়া দিতে হয়। অন্যদিকে পরিবহনের মানও যথাযথ নয়। বিআরটিএ অনুমোদিত সিটিং ক্ষমতার বাইরে আসন সংখ্যা নির্ধারিত করার ফলে এসব পরিবহনে বসার মত ন্যূনতম অবস্থাও থাকে না। গাড়ী যেমনই হোক উঠলে নির্ধারিত ভাড়া দিয়েই নামতে হবে। স্বল্প দূরত্বের যাবার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। এসব নিয়ে প্রায় প্রতিনিই বাস-কন্ডাকটরদের অভদ্রজনিত আচরণের মুখোমুখি হতে হয় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের। সেই বাস্তবতা আবার ফিরে আসুক এটা যেমনি কেউ প্রত্যাশা কর না, তেমনি লোকালের নাম নৈরাজ্যও কারো কাম্য নয়।
গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধের পরিবর্তে মালিকপক্ষ বা প্রভাবশালী মহলের কাছে আত্মসমর্পণ কোন বিবেচনাতেই কাম্য নয়। সিটিং সার্ভিসের নামে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি বন্ধ করা যেমন জরুরি তেমনি লোকাল পরিবহনের নামে নৈরাজ্য বন্ধ করা উচিত। নির্দিষ্ট রুটের ভাড়া দিয়ে যেকোন নাগরিকের যাতায়াত করার নাগরিক অধিকার রয়েছে। অন্যকোন আইন দিয়ে এই নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। সেকারণে সার্ভিস সিটিং আর লোকাল যাইহোক, যেকোন দূরত্বে যেকারো যাতায়াত নিশ্চিত করার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। বিআরটিএর বিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র সিটের ভাড়া নির্ধারিত। সে বিবেচনায় কোন পরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার বিধান নেই। গণপরিবহন যাতে যাত্রীবান্ধব হয় সেটি নিশ্চিত করাই হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কোন চাপের কাছে নয় বরং জনগণে কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বিধান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে আন্তরিক ও উদ্যোগী হবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
wadud ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ২:২৯ এএম says : 0
sarker ar busmalik ra je ki suru korlo !
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন