প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমের আগে বৃষ্টির কারণে আবারও শুরু হয়েছে ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিদিনই বাড়ছে এই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১২৮ জন। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুজ্বর বাড়ছে। জ্বর ও শরীরে ব্যথা নিয়ে কিছুকিছু রোগী তাদের কাছে আসছে। কীটতত্ত¡ বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাখালী রোগতত্ত¡ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একটি বাংলা দৈনিককে জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ শরীর ও মাথায় তীব্র ব্যথা ও পায়ে লালছে রং ধারন করলে দ্রæত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সব সময় মশারি টানিয়ে শুতে হবে।
এক সময় এদেশে ডেঙ্গুজ্বর বলতে কোন রোগ না থাকলেও ভারতের কলিকাতার সাথে বাস যোগাযোগের সূত্র ধরেই দেশে ডেঙ্গুজ্বরে উপদ্রপ শুরু হয়। প্রথমদিকে এই জ্বরের চিকিৎসা না জানার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক ছিল। অবস্থা এমন ছিল যে, ডেঙ্গুজ্বরের কথা শুনলেই সাধারণে মনে মৃত্যুভয় জেগে উঠত। এখন অবস্থা সে রকম নেই। দেখা যাচ্ছে, সময় মত চিকিৎসা হলে মৃত্যুহার অনেক কম হয়। তবে এক্ষেত্রে রোগ চিহ্নিত হবার ব্যাপারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের পক্ষে অনেক সময় সময় মত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না। তারা অর্থের অভাবে টোটকা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকেই যায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গু অনেকটাই খান্দানি রোগ। এই রোগবাহী মশার জন্ম হয় আবদ্ধ পরিষ্কার পানি থেকে। সাধারণত ফুলের টব বা এধরনের জায়গার সাথে ডেঙ্গুর সম্পর্ক রয়েছে। টবে বা বাড়ীর আঙ্গিনায় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতেই ডেঙ্গুমশার জন্ম ও প্রজনন হয়ে থাকে। নির্মাণাধীন ভবনের পানির রিজার্ভ ট্যাংক থেকেও মশার বংশবিস্তার হয়। পুরনো টায়ার কিংবা বাড়ির বিভিন্ন অংশে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। সে কারণে ৩ থেকে ৫ দিনের বেশি যাতে পানি জমে থাকতে না পারে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলাতেও মশারি ব্যবহার করা প্রয়োজন। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সূত্রানুযায়ী চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ও যত্রতত্র পরিষ্কার পানি জমে থাকার কারণে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও উপদ্রব বাড়ছে। বৃষ্টিও বন্যার কারণে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। একজন কীটতত্ত¡বীদ মনে করছেন, বর্তমান তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা এডিস মশা প্রজননের উপযোগী। তারমতে, তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রী হওয়ায় ডেঙ্গজ্ব¡রের বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের এখন অনুকূল সময়। প্রকৃত বিবেচনায় এখন সারাদেশে নির্মাণ মৌসুম চলছে। অন্যদিকে শহরজুড়ে যে উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরে তার ফলে পুরো শহরেই এখন খানা-খন্দকে ভরে গেছে। এদিকে এবারে বৃষ্টিপাত খানিকটা নিয়মের বাইরে হচ্ছে। সাধারণত বৈশাখের ঝড়ো হাওয়ার অর্থ হচ্ছে দমকা বাতাস। হঠাৎ এসে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে দেয়। পরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। এবছর ঠিক তেমনটা হচ্ছে না। আকাশ অনেকটাই দিনভর ভারী হয়ে থাকছে। নির্মাণ মৌসুম চলার কারণে সাধারণত বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী যেভাবে অযত্মে-অবহেলায় পড়ে থাকে সেসব স্থানে এমনিতেই পানি জমে। যে কোন অসতর্কতার কারণেই এডিস মশার বিস্তার ঘটতে পারে।
আমাদের আবহাওয়ায় যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তার খেসারত এক্ষেত্রেও হয়ত দিতে হচ্ছে। যেহেতু এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই বলে মনে করা হয় সেক্ষেত্রে জনসাধারণের জন্য বিপদের আশঙ্কা বেশি। মূল বিষয় হচ্ছে, বিত্তবানদের হলে না হয় তারা দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের হলে তারা কোথায় যাবেন এবং দ্রুত কিভাবে এরোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তার একটা নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকা দরকার। অন্য যে বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, মশার ওষুধ নিয়ে নানা তেলেসমাতি চলছে। দেখার কেউ নেই বলে যাদের হাতে মশা তাড়াবার দায়িত্ব তারা নানাভাবে ব্যবসা করছে। ডেঙ্গু যেহেতু মশাবাহিত রোগ তাই যে পানিতেই হোক না কেন, মশা মারার কার্যক্রম সচল থাকলে এর বিস্তারও রোধ করা সম্ভব। অন্যদিকে প্রত্যেক বাড়িওয়ালা এবং নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক সচেতন হলেও এ রোগের বিস্তার রুখে দেয়া কঠিন নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন