বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

বিশ্ব কণ্ঠ দিবস ২০১৭ এবং আপনার জিজ্ঞাসা

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন-১ আমার নাম জোবেদা মাহমুদ। আমার বয়স ৫২ বছর। আমার ৫ মাস আগে ভোকাল পলিপ অপারেশন হয়েছে। কিন্তু অপারেশনের পর আমার গলার স্বরের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি প্রায় ১ বছর হলো আমার স্বামী, সন্তানদের সাথে কথা বলতে পারছি না। আমি অ্যাজমা সমস্যায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ভুগছি। আমি একটি কলেজে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলাম। কিন্তু আমার স্বর ভাঙা সমস্যার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমার কী করণীয় সে বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উত্তরÑ আমদের স্বরযন্ত্রের অধিক ব্যবহারের ফলে যেমনÑ কারাে পেশা যদি হয় অনেক কথা বলা, জোরে চিৎকার করা, ধূমপান করা এবং কোনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও ভোকাল পলিপ হতে পারে। অপারেশনের পর যদি পুনরায় স্বরযন্ত্র অধিক ব্যবহারসহ এর সঠিক যতœ যদি নেয়া না হয় তাহলে আপনার কণ্ঠস্বর ভালো হতে আরো বেশি সময় লাগবে। আর এ বিষয়ে একজন দক্ষ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট আপনাকে উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা দিতে পারবেন।
প্রশ্ন-২ : আমর ছেলের নাম সিয়াম। বয়স ১৪ বছর। সে শিশুদের কণ্ঠস্বরে কথা বলে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি তার সমবয়সী অন্য ছেলেদের কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়েছে অর্থাৎ তারা পরুষ কণ্ঠস্বরে কথা বলছে। আমি মনে করেছি ও হয়তো ইচ্ছে করে বলে না। কিন্তু না আমি বকা দিলেও চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। ইদানীং সে স্কুলেও যেতে চায় না কারণ বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসে। অনেকে বলছে, বয়সের সাথে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হলো আমার ছেলের কি বয়সের সাথে ধীরে ধীরে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হবে?
উত্তর- বয়োসন্ধিকালের পর প্রত্যেক ছেলে এবং মেয়ের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয় অর্থাৎ শিশু কণ্ঠস্বর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন হয়। কিন্তু কোনো কোনো ছেলে এবং মেয়ের বয়োসন্ধিকালের পরও কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয় না। এই কণ্ঠস্বরের সমস্যাকে ছেলেদের ক্ষেত্রে বলা হয় পিউবারফনিয়া আর মেয়েদের বলা হয় জুভেনাইল ভয়েজ। আর এর একমাত্র চিকিৎসা হলো স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি। না, এ সমস্যা বয়সের সাথে ঠিক হবে না। কারণ আপনার ছেলের বয়স এখন ১৪ বছর, সাধারণত ৯ থকে ১২ বছরের মধেই কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয় এবং বন্ধুদের টিজিং-এর কারণে এ সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে। তাই আর দেরি না করে দ্রæত একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হন।
প্রশ্ন-৩ : আমার নাম রওশন আরা। বয়স ৪৮ এবং পেশায় আমি একজন শিল্পী। আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গান করছি। ৩ মাস হলো আমার স্বরের পরিবর্তন হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, নডিউল হয়েছে, অপারেশন করতে হবে। আমার পরিচিত এক ব্যক্তির স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে গলার স্বর ভাঙা সমস্যার উন্নতি হয়েছে। আমি জানতে চাই, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন এবং নডিউল ভালো হবে কিনা? এই চিকিৎসায় কতদিন সময় লাগতে পারে এবং নডিউল কি আরো বড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
উত্তরÑ আমাদের স্বরযন্ত্রে দুটি দÐ থাকে যাকে ভোকাল কর্ড বলা হয়। নডিউল হলো ভোকাল কর্ডের একপাশে সামনের দিকে ১/৩ ভাগ এবং পেছনের দিকে ২/৩ ভাগ অংশে সাদা-গোলাপি রঙের হয়ে কিছু অংশ ফুলে ওঠে। সাধারণত যাদের পেশা হলো কথা বলা বা স্বরযন্ত্র অনেক বেশি ব্যবহার করা যেমনÑ শিক্ষক, শিল্পী, নেতা তাদের এ সমস্যা হয়ে থাকে। হ্যাঁ নডিউলের আকৃতি যদি ৩ মিলিমিটার এর কম তাহলে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে অবশ্যই ভালো হওয়া সম্ভব। এ চিকিৎসায় নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে অতি দ্রæত ভালো হয়ে যাবেন। তবে সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে নডিউল আরো বড় হতে পারে।
প্রশ্ন-৪ : আমার নাম সরোজ কুমার। আমি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কণ্ঠস্বরজনিত সমস্যায় ভুগছি। আমার কণ্ঠস্বর নারীদের মতো। ডাক্তার বলেছেন, পিউবারফনিয়া। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের অনেক তিরস্কারের মধ্য দিয়েও পড়াশোনা খুব কষ্টে শেষ করেছি। বর্তমানে একটি হোটেলে কর্মরত আছি। কিন্তু কণ্ঠস্বরের সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কোনো পদোন্নতি পাচ্ছি না এবং নিজের বিয়ের ব্যাপারেও ভাবতে পারছি না। এখন আমার বয়স ২৮ বছর। তাই জানতে চাই স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির মাধ্যমে কি এখন আমার সমস্যার উন্নতি সম্ভব?
উত্তর- : হ্যাঁ অবশ্যই। বয়সের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের দেয়া কিছু ব্যায়াম, গলায় ম্যাসাজ, রিলাকজেশন ও নিয়মকানুন এবং নিয়মিত থেরাপির মাধ্যমে প্রায় এক মাসের মধেই স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়া সম্ভব। এর ফলে পেশাজীবনে একজন সফল ব্যক্তি এবং নিজের বিয়ের ব্যাপারেও ভাবতে আপনার আর কোনো বাধা থাকবে না। এর একমাত্র চিকিৎসা হলো স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি।
প্রশ্ন-৫ : আমর নাম রুবিনা পারভিন। বয়স ৩৩। আমি একজন গৃহিণী। পাশাপাশি আমি একটি সামাজিক ক্লাবের সংগে যুক্ত আছি। আমার দুই ছেলে মেয়ে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা জন্য, বাসায় কাজের লোকের সাথে এবং ক্লাবের সদস্যদের সাথে প্রতিদিন আমাকে অনেক কথা বলতে হয়। বর্তমানে আমার কণ্ঠস্বর কর্কশ স্বরে পরিবর্তন হয়েছে। আমি ফিসফিস করে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু গলায় ব্যথা অনুভব করছি। আমি গলায় পরীক্ষা করিয়েছি, ডাক্তার বলেছেন ল্যারিনজাইটিস। এখন আমার কি করণীয় সে বিষয়ে বলার অনুরোধ রইলো?
উত্তরÑ ল্যারিনজাইটিস হলো ভোকাল কর্ডের প্রদাহ। আমাদের স্বরযন্ত্রে দুটি দÐ থাকে যাকে ভোকাল কর্ড বলা হয়। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেক বেশি কথা বলা। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ঠাÐার সমস্যা, জোরে চিৎকার করা, শ্বাসনালীর ইনফেকশন, গ্যাস্ত্রিক-আলসারের সমস্যা থেকেও হতে পারে। আপনার প্রথম চিকিৎসা হলো স্বরযন্ত্রের বিশ্রাম অর্থাৎ কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে। ফিসফিস করে কথা বলা যাবে না। কারণ এতে আমাদের ভোকাল কর্ডে ঘর্ষণ হয় যা আপনার জন্য খুব ক্ষতিকর। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং দ্রæত একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হন।
হিমিকা আরজুমান
ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এবং
কনসাল্ট্যান্ট স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট, থেরাপি প্লাস
৫৯, প্রবাল হাউজিং, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
০১৭৫৯১৯৫৬২২

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন