শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

শিশু অপহরণ ও পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অপহৃত হওয়ার ২৪ দিন পর ৫ বছরের ফুটফুটে শিশু সুমাইয়া মায়ের কোল ফিরে পেয়েছে। গত ৩ এপ্রিল কামরাঙ্গির চরের বড়গ্রাম এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে অপহৃত হওয়ার পর থেকেই শিশুটির পিতা-মাতা বিনিদ্র রজনী পার করছিল। গত বুধবার গভীর রাতে যাত্রাবাড়ির কদমতলি এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধারের পর পিতা-মাতা ও শিশুটিকে ঘিরে হৃদয়প্লাবি আনন্দাশ্রুমন্থিত দৃশ্যের অবতারণা হয়। অপহরণের ২৪ দিন পর সুমাইয়ার ফিরে আসা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। প্রতিদিনই অসংখ্য শিশু হারিয়ে যাচ্ছে বা অপহরণের শিকার হচ্ছে। এসব হারিয়ে যাওয়া শিশুর পিতা-মাতারা পুলিশ-র‌্যাবের কাছে দৌড়ান তাদের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য। মোটা অংকের মুক্তিপণ দিয়ে কোন কোন পিতা-মাতা সন্তানকে ফিরে পেলেও অধিকাংশই অবৈধ পথে পাচার ও বিক্রি হয়ে যায় অথবা কোথাও কারো লাশ পাওয়া যায়। রাস্তা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধারের পর অপহরণকারী হিসেবে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, অপহরণকারী চক্রের আরো তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে কথিত অপহরণকারী চক্রের সদস্য বৃষ্টিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত বৃষ্টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছে বলে পুলিশ দাবী করেছে।
সুমাইয়াকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক একইভাবে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নিখোঁজ হওয়া আদরের সোনামণিদের ফিরে না পাওয়ার আর্তি আমাদেরকে ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ করে। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। অপহৃত শিশু ও নারীরা সীমান্তপথে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তবে অপহৃত হওয়ার পর সাথে সাথেই তারা পাচারের শিকার হয়না, ২৪দিন পর সুমাইয়াকে পুনরুদ্ধারের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়,  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে অপহৃত শিশুদের পাচার ঠেকিয়ে পুনরুদ্ধার সম্ভব। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থেকে অপহৃত বায়েজিদ নামের ৮ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করতে নেমে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকা থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সেই শিশুর দেয়া তথ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে ফেব্রæয়ারি মাসে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ১৭টি অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ফরিদপুর, ভোলা, বরিশাল, গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত এসব শিশুকে আটকে রেখে স্থানান্তর করতে তারা চেতনা নাশক ওষুধ ব্যবহার করে এবং ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের ওভারডোজে অন্তত ২ শিশুর মৃত্যুর কথাও অপহরণকারী চক্রের নেতা স্বীকার করেছিল বলে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়।
শিশু পিতা-মাতা এবং দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুর শিক্ষা এবং গড়ে তোলার জন্যই আমাদের চেষ্টা, শ্রম ও অর্থ ব্যয়িত হয়। সেই আদরের সন্তানরা যদি অপহরণের শিকার হয়ে চিরতরে বিদেশে পাচার হয়ে যায়, লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণের শিকার হয়ে নির্মমভাবে শিশুদের প্রাণ হারাতে হয়, বিদেশে পাচারের পর তাদের বেআইনী ও অসামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয়, অথবা দেহের কিডনীসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো খুলে নিয়ে বিক্রি করে, তবে দুঃখ রাখার জায়গা থাকে না। প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস নিয়ে রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকা অপহরণকারীরা শিশুদের নানাভাবে ফুসলিয়ে, প্রলুব্ধ করে এবং সুযোগ মত অজ্ঞান করে গাড়িতে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। সন্তান হারানো পিতা-মাতা দিশেহারা হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধর্না দিলেও ত্বরিত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থতা বা অভিযোগের ঢিলেঢালা তদন্তের কারণে পাচারকারীদের হাতে পৈশাচিক নির্মমতার শিকার হয় শিশুরা। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতেও অপহরণকারী চক্রের সদস্য রয়েছে বলে গতকাল একটি সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। শিশু ও মানবপাচারে জড়িতরা একই সাথে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকে। শিশু, নারী, মাদক ও অস্ত্র-বাণিজ্যের এই চক্র দেশ ও জাতির ঘৃণ্য শত্রæ। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এদের নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশু অপহরণের মত যে কোন ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তের সব পয়েন্টসহ সর্বত্র প্রযুক্তিগত নজরদারি ও সাঁড়াশি অভিযানে নামতে হবে। সেই সাথে শিশুদের চলাফেরা, বেড়ে ওঠা ও নিরাপত্তার বিষয়ে পিতা-মাতা ও সমাজের সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিশু পাচারকারীদের সম্পর্কে সকলকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন