স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পরিবহন শ্রমিকদের একাংশের নেতৃত্বে থাকা ঐক্যপরিষদ নামের একটি প্যানেলের নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে একতা পরিষদের নেতৃত্বে থাকা আগের কমিটিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। এ মর্মে তারা সম্প্রতি মেয়রের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তারা বলেন, নির্বাচনের কোন দিনক্ষণ ঘোষণা না করেই আগের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সরকার সমর্থক চালক-শ্রমিকরা রাতের আধারে নিজেদের বিনা প্রতিদ্ইন্তায় নির্বাচিত বলে দাবি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আকতার দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ সকল প্রকার নিয়ম-নীতি মেনেই আইন সিদ্ধভাবে এ নির্বাচনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের নেতৃত্বে থাকা একতা পরিষদ নামের একটি প্যানেলের পাশাপাশি সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামে আরেকটি প্যানেলও এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পরে সমাজ কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়া আর অন্য কোন প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় আমাদের প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে শ্রম অধিদফতরের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
আকতার দেওয়ান বলেন, গত ২৭ মার্চ পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ একটি সুন্দর নির্বাচন করার লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডিএসসিসি’র সহকারী পরিবহন তত্ত¡াবধায়ক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ, সহকারী নির্বাচন কমিশনার পরিবহন বিভাগের হিসাব সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও একই বিভাগের টাইমকিপারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নে সদ্য সমাপ্ত হওয়া নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আমার কাছে নির্বাচন পরিচালনা করার দায়িত্ব আসার পর আমি সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সকল প্রকার নির্বাচনী আইন-কানুন মেনেই নির্বাচনটি পরিচালনা করেছি। তিনি বলেন, এই মর্মে আমি ১৪ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের দিনধার্য করে একটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করি।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৯ মার্চ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৩০ মার্চ খসড়া ভোটার তালিকার আপত্তি, ০১ এপ্রিল মনোনয়নপত্র সরবরাহ, ০২ এপ্রিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ০৩ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা, ০৪ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই, ০৫ এপ্রিল বাতিলকৃত মনোনয়নপত্রের বিষয়ে আপীল গ্রহণ, একই তারিখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, ০৬ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ ও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিদের তালিকা প্রকাশ, ১৪ এপ্রিল ভোট গ্রহণ ও একই তারিখ ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা।
নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলে যে অভিযোগ উঠেছে এ মর্মে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি যথাযথ পালন করেছি। এই মর্মে যদি কারো ওজর আপত্তি থাকে তাহলে তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৫ দিন পরেও যেহেতু কেউ আমার কাছে কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি সেহেতু এনিয়ে আমার কোন কিছু বলার নাই।
ডিএসসিসির পরিবহন শ্রমিকরা জানান, প্রতি দুই বছর পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সে অনুসারে গত ১৪ ফেব্রæয়ারি বিগত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এ কমিটি একতা পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করে থাকে। তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী থাকে ঐক্য পরিষদ।
নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম শাহীন বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনী সকল প্রকার প্রক্রিয়া শেষে আমাদের একতা পরিষদের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। গত ০৬ এপ্রিল আমরা নির্বাচনী ফলাফল ঢাকা বিভাগীয় শ্রম-দফতরে জমা দিয়েছি। নির্বাচন বিষয়ে শ্রম অধিদফতর থেকে কোন প্রকার প্রশ্ন উঠেছে বলে আমার জানা নাই।
তিনি বলেন, গত ১৬ এপ্রিল ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের কাছে নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা শপথও নিয়েছে।
এ ব্যাপারে ঐক্য পরিষদের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আগের কমিটি সম্পূর্ণ পাতানো একটি নির্বাচন করেছে। সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামে যারা ফরম কিনেছে বলে বলা হচ্ছে তারাও আকতার দেওয়ানদের লোক। নির্বাচনের বৈধতা নিতে তাদের অন্য প্যানেল সাজিয়ে ফরম কিনেছে বলে দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেউ কিছুই জানে না। রাতের আধারে নিজেদের বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত দেখিয়েছে তারা। এজন্য সাধারণ সদস্যরা ক্ষুব্ধ বলেও তিনি জানান। বিভাগীয় শ্রম দফতরের উপ-শ্রম পরিচালক আবু হাসনাত ইনকিলাবকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন