ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (ইডকল)’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষত, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য গৃহীত টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে ইডকলকে বরাদ্দ দেয়া এবং সে সব অর্থের সিংহভাগই লুটপাট হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের সংশ্লিষ্টরাও এখন নড়েচড়ে বসেছেন। এনজিও’র মাধ্যমে কাজ করিয়ে পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের অভিযোগ এসেছে ইডকলের বিরুদ্ধে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে ইডকলের কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে ইডকল সোলার প্যানেল, বায়োগ্যাস প্রকল্পের মত গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিলেও প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, কথিত ইডকল একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান নাকি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরাও তা নিশ্চিত হতে পারছেন না। তবে ইডকলের কর্মকান্ড ও মুনাফাবাণিজ্যের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সাবেক মুখ্যসচিবের নাম উঠে এসেছে। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: আফছারুল আমিনের মতে, প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে দুস্থবান্ধব কর্মসূচির বরাদ্দের অর্থ দিয়ে ইডকলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসানোর কাজে ব্যয় করা ষড়যন্ত্রের নামান্তর।
সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকেই এখন ইডকলের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতাসহ নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকেই এসব প্রকল্প দরিদ্র মানুষের সহায়ক প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত সাড়ে চার দশকে বিভিন্ন সময়ে দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও এসব প্রকল্প কখনো বন্ধ হয়নি। বর্তমান সরকারও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। টিআর, কাবিখা ও কাবিটা’র জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের কিছু কিছু অভিযোগ ইতিপূর্বে পাওয়া গেলেও এ খাতের বরাদ্দ শত শত কোটি টাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে সরিয়ে নেয়ার মত নজির ইতিপূর্বে আর নেই। এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে গ্রামীণ জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত থাকায় এ খাতের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হলে তা স্বাভাবিকভাবে সরকারের জনপ্রিয়তায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সম্ভবত, এ কারণেই সরকারের দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ এসব প্রকল্পের অর্থ ইডকলের বায়ো গ্যাস ও সোলার প্যানেল বসানোর কাজে ব্যয় করাকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করছেন। তবে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ইডকলের সোলার প্যানেলে কোটি কোটি টাকার অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাটের যে অভিযোগ তুলেছেন এখন যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তা উদ্ঘাটনের পাশাপাশি দরিদ্র জনগণের প্রাপ্য অর্থ লুটে খাওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীও উঠে এসেছে।
ইতিপূর্বে সোলার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সাব) নামের একটি সংগঠন অভিযোগ করেছিল, ইডকলের মাধ্যমে কথিত সৌরবিদ্যুত প্রকল্পে বরাদ্দের ৯০ শতাংশই দুর্নীতিমূলক ভাবে ব্যয়িত হচ্ছে। বাজার মূল্যের দ্বিগুণের বেশী মূল্যে সোলার প্যানেলের মূল্য দেখানো, যেখানে সৌর বিদ্যুত প্রকল্পের আদৌ কোন প্রয়োজন নেই, এমন সব স্থানেই প্রকল্প গ্রহণ, ইডকলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনেক। তবে গত বছর থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর, কাবিখা ও কাবিটা)র বরাদ্দ অংশ থেকে ইডকলের সোলার প্যানেল প্রকল্পে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে গ্রামীণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার শামিল বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সাবেক মুখ্যসচিবের নাম আলোচনায় এসেছে। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মত একজন শীর্ষ পদাধিকারীর এমন ভূমিকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার মুখ্য সচিব দেশের মেগাপ্রকল্পসহ সব অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের সমন্বয়কও বটে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে ইতিপূর্বে যে ক’জন দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সকলেই ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ও চৌকষ আমলা। সরকারের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ওই মুখ্য সচিবের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সত্য হলে সেটা হবে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কথিত ইডকলের দুর্নীতি, সোলার ও বায়োগ্যাসের নামে অস্বাভাবিক মুনাফাবাজির নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক। সরকারের ভাবমর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই ইডকলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুদককে ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দরিদ্র জনগণের জন্য বরাদ্দ শত শত কোটি টাকার ভিন্নখাতে অনভিপ্রেত বরাদ্দ ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন