ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর হঠাৎপাড়া গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’য় নিহত দুই ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে। নিহতরা সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের চৈতি বাউলের ছেলে নওমুসলিম আব্দুল্লাহ (৩৮) ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ে ও অন্যজন একই উপজেলার ধানহাড়িয়া চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আতা ড্রাইভারের ছেলে তুহিন (২৬) বলে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেন। সোমবার সকালে নিহত দুই জঙ্গীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। গত রোববার ভোর থেকে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটি মহেশপুর উপজেলার বজরাপুরের বাড়িটিতে অভিযান শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলিতে তুহিন নিহত হন। এ সময় আত্মঘাতী হয় জঙ্গী আব্দুল্লাহ। পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম হিরণ জানান, নিহত তুহিনের বাবা আতা ড্রাইভার ভাল মানুষ ছিলেন এবং পরিবারটি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। তেমন পদধারী না হলেও নিহত তুহিনের ভাই সাজেদুর রহমান ও সেতু ছাত্রলীগ এবং টিটো সেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অপর দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও সেলিম বিএনপির রাজনীতি করতেন। চেয়ারম্যান আরো জানান, তুহিনের চলাফেরা ইদানিং সন্দেহ জনক ছিল। পোড়াহাটীর জঙ্গী আব্দুল্লাহর সাথে মিশে সে বিপথগামী হতে পারে। ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রানা হামিদ জানান, নিহত তুহিনের ভাই সাজেদুর ও সেতু এখনো ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। আরকে ভাই টিটো করেন সেচ্ছাসেবকলীগ। এদিকে যুবদলের সাবেক নেতা সেলিম জানান, নিহত তুহিন এক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার আরেক ভাই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা টিটো গত ৪ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এলাকাবাসির ভাষ্যমতে, পোড়াহাটী গ্রামের জঙ্গী আব্দুল্লাহ ও তুহিন কাঠের গুঁড়ো ব্যবসার ছদ্মাবরণে তারা গোপনে গোপনে নব্য জেএমবির সাথে জড়িয়ে পড়ে। গত ২১ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিপাড়ার ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক ডিভাইস, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি, একটি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছিল। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলার জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন সাবটেল স্পিলিট” শেষ হয়েছে। থেমে থেমে ৭টি গ্রেনেড ও ১টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে এ অপারেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ। তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সোমবার দুপুরে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামে ‘অপারেশন সাবটেল স্পিলিট” শেষ হয়। সেখান থেকে ৭টি গ্রেনেড, ১টি বোমা, ১টি ৯ এমএম পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা থেকে আগত কাউন্টার টেরেরিজমের ইউনিটের বোমা নিস্ক্রিয়কারীরা ৭টি গ্রেনেড ও ১টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তিনি আরও জানায়, এই আস্তানায় বেশ কিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে। যেগুলো দিয়ে শক্তিশালী বোমা তৈরি করা যেতো। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের শরাফৎ হোসেনের বাড়িতে পৃথক আরেক দফা অভিযানে তার ছেলে শামিমকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঝিনাইদহে কোন জঙ্গী আস্তানা থাকবে না। ইতিমধ্যে ২/৩টি জঙ্গী আস্তানা সনাক্ত করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকীগুলো সনাক্ত করে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান শুরু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন