বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

চট্টগ্রামে ‘দুবাইওয়ালা’র মেধাবী সন্তানরাও পাচ্ছে শিক্ষাবৃত্তি

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া গ্রামের আবদুল হাদী নিজামী ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে দুবাইতে আছেন। সেখানে মোটা অংকের বেতন না পেলেও দেশে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার ব্যাপারে খুবই সচেতন তিনি। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আবদুল কাইয়ুম চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- চুয়েটে কম্পিউটার বিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মেঝ ছেলে আবদুর রহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। আর ছোট ছেলে আবদুর রহমান চট্টগ্রাম মহানগরীর নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালযের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
সাতকানিয়া উপজেলা কেউচিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম ১৪ বছর ধরে আছেন সউদী আরবের রিয়াদে। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে হুমাইরা ইসলাম সরকারী সিটি কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স পড়ছেন। মেঝ মেয়ে কারিন ফাতেমা হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত। আর একমাত্র ছেলে মো: তানহার ইসলাম সরকারী মুসলিম হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
মিরসরাই আবু তোরাব মধ্যমায়ানী গ্রামের আবু জাফর ওমান প্রবাসী। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি প্রবাসে থাকলেও সন্তানদের পড়া লেখার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। তার বড় ছেলে ইউএসটিসিতে, ছোট ছেলে তানভীর হাসান চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এবং একমাত্র মেয়ে চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজে অনার্স পড়ছেন। ওই তিন প্রবাসীর সন্তানদের পড়া লেখার প্রতি এই আগ্রহের স্বীকৃতি হিসাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। তাদের মতো গত চার বছরে চট্টগ্রাম জেলার প্রবাসীদের ১১৯ জন মেধাবী সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, প্রবাসীদের ব্যাপারে এটা ধারণা হযে গেছে, তাদের সন্তানরা পড়ালেখা করে না। কিন্তু চট্টগ্রামে তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি প্রবাসীর সন্তানরা পড়া লেখা করছে এবং তাদের অনেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে সরকার প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিন বছর আগে এই বৃত্তিপ্রদান শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এর আওতা বাড়িয়ে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে। প্রবাসে যেসব বৈধ শ্রমিক আছেন তাদের মেবাধী সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ সহযোগীতা দেবে।
জেলা কর্মসংস্থান অফিসের হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রামের বিশ লাখের বেশি শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ দেশের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। অবৈধ পথে যারা বিদেশে গেছেন তাদের কোন পরিসংখ্যান এখানে নেই। প্রবাসে বসবাসকারীরা স্থানীয় ভাষায় ‘দুবাইওয়ালা’ হিসাবে পরিচিত। দুবাইওয়ালা মানে বিত্তশালী। বাস্তবেও তাই, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে অনেকে তাদের ভাগ্যবদল করতে পেরেছেন। দেশে-বিদেশে অনেক সম্পদের মালিকও হয়েছেন। তবে প্রবাসী বৈধ শ্রমিকদের বেশিরভাগই মোটামুটি বেতনে চাকরি করেন। আয়ের প্রায় পুরোটাই তারা দেশে পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দেন। কর্মসংস্থান অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক প্রবাসীর পরিবার বিদেশ থেকে আসা এসব টাকার পুরোটাই খরচ করে ফেলে। আবার ছেলে-মেযেদের পড়া লেখার বিষয়েও অনেকে উদাসীন থাকেন। তবে এই প্রবণতা এখন কমছে। প্রবাসীর পরিবারের সন্তানরাও পড়া লেখা করছে, তাদের অনেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্টিত। প্রবাসীর সন্তানদের পড়া লেখায় আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে মেধাবীদের বৃত্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত ২০১২  সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ মেধাবৃত্তি। প্রথম বছর মাত্র ১২ জনকে দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। গেল বছর ৬০ জনকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। জেলা কর্মসংস্থান অফিসের সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, অনেকের ধারণা ছিল প্রবাসে কোন শ্রমিক মারা গেলেই কেবল সরকারী সাহায্য পাওয়া যায়। কিন্তু সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার একটি হলো শিক্ষাবৃত্তি।
তিনি বলেন, বৃত্তির জন্য প্রথমে দরখাস্ত আহবান করা হয়। আবেদন যাছাই-বাছাই করে যারা মেধাবী এবং বৃত্তি পাওয়ার মতো তাদের বৃত্তি দেয়া হয। অনেক প্রবাসীর সন্তান বিষয়টি জানে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবার কাছে পৌঁছতে পারি না। আবার অনেকে লজ্জা সংকোচের কারণেও আবেদন করে না বলে জানান তিনি। বর্তমান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি শিক্ষাবৃত্তির আওতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এবছর আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এই সহযোগিতা দেয়া হবে। চার ক্যাটাগরিতে এই বৃত্তি দেয়া হয়। প্রাথমিক সমাপনি উত্তীর্ণ মেধাবীদের বছরে ৯ হাজার টাকা করে তিন বছর, জেএসসি উত্তীর্ণদের ১৪ হাজার টাকা করে ২ বছর, এসএসসি উত্তীর্ণদের ২১ হাজার টাকা করে ২ বছর এবং এইচএসসি উত্তীর্ণদের ২৭ হাজার টাকা করে চার বছর এই বৃত্তির টাকা দেয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, টাকার অংকে এই বৃত্তি খুববেশি না হলেও বৃত্তি পেয়ে তারা খুশি। বছরের শুরুতে নতুন বই কেনা থেকে নানা কাজে এই টাকা উপকারে আসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন