শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চিকুনগুনিয়া: আতঙ্ক নয়, সতর্কতাই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মশার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বাড়ছিল। কয়েক বছর আগেও ডেঙ্গু নিয়ে দেশে বেশ আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও তা এখন আর তেমনটা নেই বললেই চলে। তবে ডেঙ্গুর সমগোত্রীয় প্রায় একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে এখন হাজির হয়েছে চিকুনগুনিয়া । এডিস অ্যালবোপিকটাস এবং এডিস এজিপটি প্রজাতির দুই ধরনের মশার কামড় থেকে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়ায় বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। চিকনগুনিয়া ভাইরাসজনিত  জ্বর ৫ থেকে ১০দিন স্থায়ী হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, মাধা ধরা, দেহের বিভিন্ন স্থানে রাশ ওঠা এই জ্বরের প্রধান উপসর্গ। কখনো কখনো এই জ্বরে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলেও মৃত্যুর ঝুকি নেই বললেই চলে। তবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস থেকে সৃষ্ট জ্বরের এখনো কোন ভ্যাকসিন অথবা সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পূর্ণ বিশ্রাম, প্রচুর পানি ও তরল খাবারসহ পেরাসিটামলের মত সাধারণ জ্বর ও ব্যথা নিরোধক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় রোগ সংক্রমনকারি এডিস মশা যাতে বাড়ির আশপাশে জন্মাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্কতা এবং নিজস্ব ও সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহনই এ বিষয়ে প্রতিবিধানের একমাত্র কার্যকর পন্থা। সেই সাথে চিকনগুনিয়া সম্পর্কে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
গত কিছুদিন ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রোগটি নতুন ও অপরিচিত হওয়ায় এ থেকে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রজাতির এডিস মশা বেড়ে যাওয়াকেই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার বিষয়টিও পুনরায় আলোচনায় উঠে আসছে। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী যখন বলছেন, মশা নিধনই চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়, তখনো মশানিধন ও নগরির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে সিটি কর্পোরেশনদ্বয়ের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। ঢাকার যানজট, পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ লাঘবে নগর কর্তৃপক্ষের দায় দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নগরীর পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধিতেও তিনি  কিছু ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এডিস মশা ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিনের মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে এখন নগরবাসি অনুরূপ উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারনে কাঙ্খিত বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদি তৎপরতার কারণেও দেশের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এখন চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তা দেশের বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। ভুল চিকিৎসার স্বীকার হওয়া ছাড়া এ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই বললেই চলে। যেহেতু ইতিমধ্যেই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, এডিস মশার কামড়ে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে বিধায় সংক্রমন এড়াতে বিশেষ সতর্কতা জরুরী। চিকুনগুনিয়া জ্বর ও ভাইরাস সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্ক এড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে বিশেষ জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত কুসংস্কার পরিহার করা আবশ্যক। সেই সাথে দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকুনগুনিয়া রোগ নির্নয় এবং বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপত্র নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনের গতানুগতিক কর্মসূচিগুলোর ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে নতুন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে। আর দেশব্যাপী সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদভিত্তিক সামাজিক কর্মসূচি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শহরের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি মশা ও পানিবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ডায়রিয়াসহ সংক্রামক ব্যাধিসমুহ সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন