ফয়সাল আমীন, যুক্তরাজ্য থেকে: গত ১১ মে শেষ হলো ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা। প্রাপ্ত তথ্যে, মধ্যবর্তী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১১জন প্রার্থী। তারই অংশ হিসাবে সরব প্রচারণা চলছে প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায়। ডোর টু ডোর প্রার্থীদের ব্যক্তিগত লিফলেট বিলি ব্রিটেনের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এরই মধ্যে গত ১৬ মে লেবার পার্টি ও ১৮ মে কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনী ইশতিয়ার ঘোষণা করে নির্বাচনী পরিবেশ কে চাঙ্গা করে তোলেছে। গণমাধ্যমসহ সামাজিক সাইটগুলোও একইভাবে নির্বাচনী নানাদিক বিশ্লেষণে মনোযোগী। গোটা ব্রিটেন সহ বিশ্ববাসী লেবার ও কনজারভেটিভের রাজনৈতিক শক্তিমত্তা দেখতে আগামী ৮ জুনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। তবে এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে হ্যামস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসনটির নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এ আসনের বর্তমান এমপি, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। এবারও তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তার পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভাবে মাঠ থেকে প্রচারণা কে বেগবান করে রেখেছেন। এতে করে বাংলাদেশীদের মিলন মেলায় যেন পরিণত হয়েছে, এ আসনটির নির্বাচনী প্রচারণার চিত্র। সেই সাথে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নির্বাচনী প্রধানত একটি প্রশ্ন টিউলিপ পাশ করবে তো ? এ প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার বার্তা খুঁজেন অনেকে। কেননা, বাংলাদেশের সরকারী দল আওয়ামীলীগ ও বিরোধী দল বিএনপি সহ শরিকান সমর্থকদের চোখে (ব্রিটেনে বসবাসরত) টিউলিপ এর জয়-পরাজয়ের অর্থ একই না। স্থানীয় আওয়ামীলীগ সমর্থকরা মনে করেন টিউলিপ এর সফলতা মানে আওয়ামীলীগের ও বাংলাদেশ জয়, অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপিও শরিকান সমর্থকদের অনেকে মনে করেন টিউলিপ এর পরাজয় মানে আওয়ামীলীগ এর পরাজয়। যে কারনে ২০১৫ সালে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো লেবারের মনোনয়নে প্রার্থী হন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিরোধী পক্ষের সক্রিয় ধাক্কা এসে লাগে, সেসময় টিউলিপ বিরোধীতায়। তারপরও টিউলিপ বিজয়ী হন। সেই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এর্বাও তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে মাঠে সক্রিয়। এতে করে টিউলিপ এর আসনে নির্বাচনী প্রচারণা আলাদা মাত্রায় আলোচিত।
২০১৫ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে ১১জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লেবার দলীয় প্রার্থী হিসাবে, রুশনারা আলী, ড: রূপা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারকার নির্বাচনে তারা ৩জন স্ব স্ব আসনে বিজয় ধরে রাখার প্রত্যয়ে সক্রিয় থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। লেবার দলের ৫জন বাংলাদেশী প্রার্থীদের তালিকায় আছেন, বেথনালগ্রীন এন্ড বো আসনে রুশনারা আলী, হ্যামস্টেড এন্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ সিদ্দিক, ইলিং সেন্ট্রাল এন্ড অ্যাকটন আসনে ড: রূপা হক, ওয়েলিং এন্ড হ্যাটফিলড আসনে ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া এবং বেকেনহাম আসনে মেরিনা আহমদ। লেবার দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন স্কটল্যান্ডের এডনিবরা সাউথ ওয়েস্ট থেকে ফয়ছল চৌধুরী এমবিই এবং পোর্টসমাউথ নর্থ থেকে আব্দুল্লাহ রুমেল খান। লিবারেল ডেমোক্রেট দলের লুটন সাউথ আসনে আশুক আহমদ এমবিই, ওয়াইর ফরেস্ট আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাজু মিয়া। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বেথনালগ্রিন এন্ড বো আসনে আজমল মাশরুর, পপলার এন্ড লাইম হাউস আসনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র ওলিউর রহমান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সকলেরই ভোট যুদ্ধের কমবেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুশৃঙ্খল পরিবেশে তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, বিগত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে। সেই সাথে দলের লক্ষ্য - উদ্দেশ্য সহ স্থানীয় স্বার্থ রক্ষায় নিজেরা জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন