বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোশ আমদেদ মাহে রমজান সংখ্যা

প্যারিসে রমজান মাসের রোজা

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহমুদ শাহ কোরেশী : বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর প্যারিস যেমন নানা উচ্ছৃঙ্খলতায় উন্মত্ত, তেমনি ধর্মীয় তত্ত¡ালোচনা ও আচার-আচরণেও পাকাপোক্ত। শুধু খ্রিষ্টীয় কিংবা ইহুদিদের ক্ষেত্রে নয়, মুসলমানদের জন্যও এর পর্যাপ্ত দৃষ্টান্ত হাজির করা যাবে। গ্র্যান্ড মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশক ইসলামী সত্যতা ও সংস্কৃতির প্রচারণায় তৎপর হয়ে পড়ে নানা অনুষ্ঠান বা উৎসব উদযাপনের সুযোগে।
সাধারণভাবে বোঝা যাবে না কখন মাহে রমজান এলো কিংবা গেল। কিন্তু বিশ্বাসী মুসলিম সম্প্রদায় যথানিয়মে, ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে সেহরি খাবার জন্য উঠে পড়ে। সারাদিন রোজা রেখে, সন্ধ্যায় ইফতার সেরে, তারাবি পড়ে দৈনন্দিন রমজান মাসের পবিত্রতা অক্ষুণœ রাখে। আরব যুব সম্প্রদায়ের কেউ কেউ সারা রাত খোলা রাখার কালচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে একেবারে সেহরি খেয়েই ঘুমাতে যায়। তার আগে আনন্দ ফুর্তি বা আড্ডায় মগ্ন থাকে।
অসুবিধার কথা হচ্ছে, রোজার সময় দিনের ধৈর্য সাধারণত অনেক দীর্ঘ হয়। সবার পক্ষে এত দীর্ঘক্ষণ রোজা রাখা সম্ভব হয় না।
ষাট ও সত্তর দশকে খুব কম বাঙালি প্যারিসে ছিল। আমি তখন প্যারিসে গিয়ে একজন বাঙালি মুসলমান বন্ধুকে পাই। তিনি তিরিশটি রোজাই রাখতেন। নিজে রান্নাবান্না করতেন। সব উপকরণ তার কাছে ছিল। তাই আমার দায়দায়িত্বও তিনি নিজে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই গ্রহণ করেন।
এখনও মনে পড়ে, তিনি চমৎকার ছোলা ভাজা ও পেঁয়াজু তৈরি করতেন। প্রায় কয়েকজন বন্ধুসহ ইফতারের উৎসব সমাপন করা হতো।
একটু আগে যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আমাদের সতীর্থ রুহুল আমিন মজুমদারের আত্মীয় নূর মোহাম্মদ শেখ। তিনি আমাদের অন্তত দু’বছর আগে প্যারিসে গিয়েছিলেন। আমার সহযাত্রী অর্থনীতিবিদ মুজাফ্ফর আহমদও ছিলেন। এই দু’জনের দৃষ্টান্তে তখন রোজা না রেখে উপায় ছিল না। ভোররাতে সেহরি খাওয়া আর ইফতারের আয়োজন সবাই মিলেমিশে করতে হতো। কিন্তু এসবের মধ্যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোনো যোগসাজশ ছিল না। বরং সে সময়ে প্রায় সব খাদ্যদ্রব্যে শূয়রের চর্বি মিশ্রিত থাকত। আশির দশক থেকে বলতে গেলে নানা সূত্রে হালাল খাবার তৈরি হতো বা বাইরে থেকে আমদানি হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা এই শহরে এত বেড়ে গেল যে, ২০০৫ সালে আমি গিয়ে একটা বড়সড় ইফতারির দাওয়াত পেয়ে গেলাম। তখন প্যারিসের একটা এলাকায় বাংলা সাইনবোর্ডসহ বেশ কিছু মসলাপাতি বাঙালির দোকানও হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্যারিস মসজিদের কিংবা এবাদতখানার সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেল। এভাবে বিগত অর্ধ শতাব্দীতে রমজানের তাগিদে প্যারিসের মতো শহরেও অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়ে গেল বলা চলে।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন