শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে শান্তিরক্ষীদের -প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০১৭ উপলক্ষে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি আশা করি আপনারা (জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণারী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাবেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ শুরুতেই শান্তিরক্ষাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানান।
প্রেসিটেন্ড আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনারা আপনাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করে যুদ্ধবিধ্ব দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ওই সকল দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সকল শান্তি দেশ আপনাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্যের জন্য অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে, যা আপনাদের সাহস, বীরত্ব, অসামান্য পেশাদারিত্ব ও দক্ষতারই অর্জিত ফসল।
তিনি বলেন,আপনারা জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া জাতিসংঘ মিশনে আপনাদের অংশগ্রহণ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা দেশমাতৃকার যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত। আমি আপনাদের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ এবং উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
আবদুল হামিদ বলেন, শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আপনাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে হয়। তাই জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অব্যাহত অংশগ্রহণ সুদৃঢ় করতে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সদস্যদের এসব বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দান নিশ্চিত করা আবশ্যক।
১৯৭৪ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রত্যয়ে ধ্বনিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, তখন থেকে বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং শান্তিরক্ষীরা শুরু থেকে তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা অর্জন করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শান্তিরক্ষীরা দেশের অর্থনীতি এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনীতি স¤প্রসারণে অনেক অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা প্রেরণকারী দেশ এবং এতে নারী শান্তিরক্ষাকারীদের অংশগ্রহণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট দেশে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, নারী পুলিশকে সহায়তা এবং নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের শক্তিশালী অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশের পরিবেশের উপযোগী এবং আধুনিক সমরাস্ত্র ও তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ শান্তিরক্ষী প্রেরণ করছে।
রাষ্ট্রপতি মিশনে দায়িত্বপালনকালে শহীদ দুই জন ও ৮ জন আহত শান্তিরক্ষীকে পদক প্রদান করেন। পরে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪ দেশের শান্তিরক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিনস, সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
মন্ত্রীবর্গ, ডেপুটি স্পিকার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক, কূটনীতিক, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও মহা পুলিশ পরিদর্শক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় কর্মরতদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন হচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে সামনের কাতারে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮১৫ জন জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ২০১ জন নারী।
১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের ১৩৩ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্বপালনকালে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট কঙ্গো ও মালিতে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন