শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অনলাইন বাজারের বিস্তার ইতিবাচক

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অনলাইনে কেনাকাটা বাড়ছে। এই সুবাদে অনলাইন বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। নগর জীবনের কর্মব্যস্ততা, সময়ের অভাব, যাতায়াতের কষ্ট, যানজট ইত্যাদি কারণে মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় ঝুঁকে পড়ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচা হচ্ছে। অনলাইন বাজার থেকে জামা-কাপড়, শাড়ি-গহনা থেকে শুরু করে শাকসবজি-তরিতরকারী পর্যন্ত সবকিছুই কেনা যায়। ঈদ ও অন্যান্য উৎসবের সময় অনলাইন বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। প্রয়োজনীয় যে কোনো পণ্য কিনতে চাইলে অর্ডার  দেয়ামাত্র প্রার্থিত পণ্য ঘরে পৌঁছে যাবে। ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, সব পণ্য মিলছে অর্ডার দিলেই, এমন কি সেহেরী-ইফতারি পর্যন্ত। অনলাইন বাজার বা অনলাইনে কেনাকাটার শুরু রাজধানীতেই। কয়েক বছরের ব্যবধানে তা এখন অন্যান্য বড় শহরেও সম্প্রসারিত হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে এখন দেড় কোটিরও বেশী  লোকের বাস। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের জন্যে গোটা রাজধানীতে অসংখ্য দোকানপাট, বিপনবিতান, শপিংমল গড়ে উঠেছে। মনে হয়, ঢাকা যেন দোকানপাট-মার্কেটেরই শহর। জীবনের প্রয়োজনে পণ্যাদি কিনতেই হয়। কিনতে হলে দোকান-মার্কেট-মলে যেতে হয়। সেই যাওয়াটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। সময় বের করে স্বচ্ছন্দে যাওয়া অত্যন্ত দূরূহ ব্যাপার। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তাতেই পার হয়ে যায়। এর ওপর দোকানপাটে-মার্কেটে ভীড় তো আছেই। বিশেষ করে ঈদের সময় বা অন্য কোনো উৎসবের সময় কেনাকাটা করতে গিয়ে যে ঝাক্কি-ঝামেলায় পড়তে হয়তা অবর্ণনীয়। এই প্রেক্ষাপটে অনলাইন বাজার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। দোকানে দোকানে ঘোরারও দরকার নেই। অনলাইন প্রার্থিত পণ্যের ছবি, বিবরণ ইত্যাদি দেখে মতো অর্ডার দিলেই ঘরে যথাসময়ে পৌঁছে দেয়ার মতো ব্যবস্থা রয়েছে এবং এ ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কেনাবেচার নির্দিষ্ট সাইটগুলো ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কেনাবেচা জমজমাট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা পেজে ক্রেতারা খুঁজে নিচ্ছে পছন্দের পণ্য। ই-কমার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জানিয়েছেন, প্রতিদিন দেশের এক হাজার অনলাইন শপ অনলাইনে ডেলিভারি দেয় ২০ হাজার অর্ডার। এছাড়া ফেসবুকভিত্তিক আছে ১০ হাজারেরও বেশী। এই বাজারে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা পণ্য বেচাকেনা হয় এবং চলতি বছর তা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে । তার আশাবাদ, সরকারের সহযোগিতা পেলে অনলাইন কেনাকাটা মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের সুযোগে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের যে জনপ্রিয়তা ও বিস্তার ঘটছে তাতে আমাদের দেশের অনলাইন বাজার যে আরো বাড়বে অনলাইনে  কেনাকাটা যে আরো জোরদার হবে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের যে বাজার ব্যবস্থা ও সিস্টেম তাতে ক্রেতার শরীরী উপস্থিতির বিকল্প নেই। কিন্তু এই ডিজিটাল মার্কেট ও কেনাকাটায় ক্রেতার উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন নেই। অনলাইনে অর্ডার দিলেই হলো। এক্ষেত্রে কোনো বাড়তি সময় ও শ্রম দিতে হচ্ছে না। ‘পাঁচ দোকান ঘুরে পছন্দের’ একটা ব্যাপার আছে, যেটা আমাদের দেশের ক্রেতারা করে থাকে। তুলনামূলকভাবে ভালো বা পছন্দের পণ্য কেনাই থাকে এর একমাত্র লক্ষ্য। অনলাইন কেনাকাটায় সেই ভালো ও পছন্দের পণ্য কেনা কতদূর সম্ভব সেটা একটা প্রশ্ন বটে; তবে কোনো পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া বাজার যেহেতু বাড়ছে, সুতরাং পণ্য কেনার জন্য ৫-১০টি অনলাইন শপে নজর ফেলে পছন্দের পণ্য কেনা অসম্ভব নাও হতে পারে আগামীতে।
পণ্য কেনাকাটার এটা একটা নতুন মাধ্যম। মাধ্যমটি সহজ। তাই এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিধিও সাম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে শ্রম ও সময় বাঁচা ছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষ অর্থেরও সাশ্রয় হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। এই বাজারে উদ্যোক্তা বা বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ার মধ্যদিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এ বাজারে দোকানগুলোতে বড় পুঁজি, ভালো জায়গা, চৌকস কর্মচারীর কোনো প্রয়োজন নেই। যে কোনো ব্যক্তি তিনি নারী কিংবা পুরুষ যেই হোন না কেন, একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পারেন। দেশে বেকারত্ব প্রকট। কয়েক কোটি মানুষের কাজ নেই, যাদের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা এক কোটির ওপর। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতি অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছে এবং সাফল্যের মুখ দেখেছে। তারা অন্যান্য যুবক-যুবতীর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন বাজার ও এই বাজারের কেনাকাটা নিয়ে যথাযথ প্রচারণা হলে এ ক্ষেত্রে দ্রæত অগ্রগতি হবে। নাগরিকদের পণ্য কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি, আরাম ও ঝুঁকিমুক্ততা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অবশ্যই করণীয় আছে। সরকার এই বাজার বিস্তারে সহযোগিতা করে এই করণীয়টা অনেকখানি সম্পন্ন করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ রয়েছে সেই সুযোগ কাজে লাগাতেও সরকারের সহযোগিতা দেয়া উচিৎ। আর একটি কথা, যারা অনলাইন শপের মালিক, যারা অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করছে, তাদের অবশ্যই পণ্যের মান ও প্রদত্ত বিবরণের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও সততার পরিচয় দিতে হবে। ক্রেতারা কোনো কারণে প্রতারিত ও বঞ্চিত হলে বাজারের প্রতি তাদের অনীহা সৃষ্টি হবে, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন