শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ইইউর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তভর্’ক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নৃ। দেশে কয়েকটি জঙ্গিবাদি সন্ত্রাসের ঘটনায় বিদেশি নাগরিকরা আক্রান্ত ও হতাহত হওয়ার পর গত বছর ইউরোপীয় ইইউনিয়নভুক্ত দেশ বৃটেন, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে কার্গো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বৃটেন, জার্মানী ও অস্ট্রেলিয়া হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কথা জানিয়ে তারা কার্গো চলাচল বন্ধ বা সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য এসব দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেছিল বলে জানা যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বৃদ্ধিকল্পে নতুন বিশেষ বিধিব্যবস্থা গ্রহনের পর কতিপয় দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শুধু বিমানবন্দরই নয়, পুরো বাংলাদেশই এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন ও নিরাপত্তাহীন। বলাবাহুল্য, কথিত জঙ্গিবাদের উত্থান এবং এ নিয়ে অতি প্রচারনা থেকে  সৃষ্ট আতঙ্কের ফলেই বিদেশিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের নেতিবাচক ধারনা পোষণ করতে শুরু করে। দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীন ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি সম্পর্কে বিদেশিদের আশঙ্কা অমূলক না হলেও এ ধরনের ঝুঁকি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে। এ ধরনের আশঙ্কাকে পুঁজি করে কার্গো নিষেধাজ্ঞা ও দীর্ঘ মেয়াদে ভ্রমন সতর্কতা জারির যৌক্তিকতা সংশ্লিষ্টদের বিবেচনা রাখতে হবে।
এমনিতেই দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই স্থবির। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানে কোন গতি ফিরছেনা। এমনকি বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এতকিছুর পরও তৈরী পোশাক শিল্প এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর ভর করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা মোটামুটি সন্তোষজনকভাবেই সচল রয়েছে। তবে সরকারের ঘোষিত রূপকল্প অনুসারে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত করতে হলে যে হারে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন, তা হচ্ছেনা। চলতি অর্থবছরে সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর পক্ষ থেকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.২৪ শতাংশ হিসেবে প্রাক্কলন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশেই বেশি হবে না বলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের বাস্তবতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং অর্জনের ক্ষেত্রে এ ধরনের লুকোচুরি ও অস্বচ্ছতা রয়ে যাচ্ছে। জিডিপি লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন দেশি বিদেশি থিঙ্কট্যাঙ্ক ও সংস্থাগুলোর বক্তব্যে গড়মিল ও রশিটানাটানি পরিলক্ষিত হয়। জ্বালানী তেলের সর্বনিম্ন মূল্য এবং অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশেও যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি, সেখানে নানামুখী প্রতিবদ্ধকতা ও অনিশ্চয়তা সামনে রেখে আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে আগামীতে দেশের অর্থনীতির জন্য কোন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করা যায়না। দেশে ইতিমধ্যেই একটি  জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতির আভাস দেখা গেলে এখনো রাজনৈতিক সমঝোতার কোন লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছেনা। পক্ষান্তরে দেশে কাঙ্খিত বিনিয়োগ না হলেও ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাট, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতার মধ্যে ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে থাকার প্রেক্ষাপটে ব্যাংক আমানতে সুদের হার কমিয়ে দেয়া হলেও নতুন বাজেটে ব্যাংক স্থিতির উপর বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ শতাংশ ভ্যাটহার বজায় রাখার পাশাপাশি ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগে দেশে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম সাতমাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছিল ৩৬ শতাংশ। বেসরকারী থিঙ্কট্যাঙ্ক সিপিডি বাজেট পূর্ব এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৩৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অর্থনীতির এসব নেতিবাচক উপাত্তের মধ্যেও জনগনের উপর বাড়তি ভ্যাট ও শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হলেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। বিশেষত: দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জননিরাপত্তার মত ইস্যুগুলো পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যে অসম্ভব তা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের না বোঝার কথা নয়। বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়া, টেরিফ ও ননটেরিফ ব্যারিয়ার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি দেশকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তুভুক্তির এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও কর্মসংস্থার বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। জঙ্গিবাদের মত স্পর্শকাতর ইস্যুগুলো মোকাবেলায় রাজনৈতিক বেøইমগেম পরিহার করতে হবে। বিমান বন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর সমুহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মত ইস্যুগুলোকে ইতিবাচক রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ওবাইদুল ইসলাম ৭ জুন, ২০১৭, ১০:৫৩ পিএম says : 0
সন্ত্রাসী হামলা চলছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ডেনমারকে আর তারাই ঝুকিপূর্ণ বলছে বাংলাদেশকে । তামাসা আর কি !
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন