শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দুনিয়ার লোভে পড়ে আল্লাহর দ্বীনকে ভুলে গেলে চলবে না

ফুরফুরা দরবার শরীফের মাহফিলের দ্বিতীয় দিন

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি কলকাতা থেকে : গতকাল কলিকাতার হুগলি জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৩ দিনব্যাপী ১২১তম ঈসালে সাওয়াবের ২য় দিনে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ফুরফুরা দরবার শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করেন। দিনব্যাপী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ইবাদত-বন্দীগী ও জিকির আজকার। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং ইসলাম প্রচারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ.) এর নসিয়াত অনুযায়ী গত পরশু শনিবার কলকাতার হুগলী জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৪ দিনব্যাপী ১২১তম  ইসওয়ালে সাওয়াবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। আল্লামা পীরজাদা হযরত মাও. জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা.) বলেন, দুনিয়া ততদিন টিকে থাকবে যতদিন ইসলাম ও দ্বীন দুনিয়ায় থাকবে। আল্লাহ তাওয়ালা দুনিয়া সৃষ্টি করেছে মানবজাতির জন্য। আর মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদাতের জন্য। তাই দুনিয়ার ধন দৌলতের লোভে পড়ে আল্লাহ ও তার দ্বীনকে ভুলে গেলে চলবে না। আমরা যতদিন পৃথিবীতে থাকব ততদিন আল্লাহর ইবাদাত ও তার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের পথে চলব। আর এই দ্বীনের পথে চলতে কোন বাধা বিপত্তি আসলে তা আমাদের সকলের একসাথে প্রতিহত করতে হবে। ইসলামের হেফজতকারী আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজে। সকল ঈমানদার ব্যক্তির সাথে আল্লাহর হেফজাত রয়েছে। যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন কোন ব্যক্তির পক্ষে ইসলামের ক্ষতি করা বা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। যারা আখিরাতের কথা চিন্তা করে তারা কখনই অন্যায়ের পথে যেতে পারে না।
হুজুর আরো বলেন, দাদা হুজুর হযরত আবু বক্কর সিদ্দীকি (রহ.) এর নসিয়ত অনুযায়ী তার ভালবাসার টানে আজ আমরা দূর দূরান্ত থেকে এসে একসাথে সম্মিলিত হয়ছি এবং একসাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছি একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য, তার ইবাদাতের জন্য। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের সর্বোত্তম পন্থা সালাত আদায় করা। তাই কখনই আমরা সালাত আদায় করতে ভুলবো না। সালাত বেহেশতের চাবি। আর সকল মুসলমানের আখিরাতে বড় চাওয়া বেহেশত। তাই বলে শুধু সালাত আদায় করলেই হবে না কোরাআনের আলোকে চলতে হবে এবং জীবন যাপন করতে হবে। সুদ ঘুষকে বর্জন করে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সেবাই বড় ধর্ম। যে কারণে দাদা হুজুর মানব কল্যাণে অনেক সেবামুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। হযরত মরহুম বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকীও সায়াদাতীয়া জে কে ইসলামী মিশন ও জমিয়াতে জাকিরীন নামক সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালের জন্য উপকৃত হচ্ছে। আল্লামা পীরজাদা হযরত মাও. জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা.) আরো বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় কালিমার দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান-আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
হুজুর আরো বলেন, ঐতিহাসিক এ মাহফিলে সঠিক নিয়্যাতে একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য আসতে হবে। কোন মাজারকে সিজদাহ নয়। সিজদাহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে। দুনিয়া অতি ক্ষণস্থায়ী। আর আখিরাত অনন্তকাল। আখিরাতের জন্য এখান থেকে সঠিক সওদা করতে হবে। হুজুর বলেন, বুখারী শরীফের ১ম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নিয়তের উপর সকল কাজের ফলাফল নির্ভর করে। তাই রোগ ভালো হবে, অর্থবিত্ত বৃদ্ধি পাবে বা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ইত্যাদির নিয়তে কেউ এসে থাকলে ভুল করেছেন। কারণ এখানে শুধু দুনিয়া নয়, বরং আখেরাতের ওষুধ বাতানো হয়। আল্লাহকে রাজি খুশি করে কিভাবে কবরে যাওয়া যাবে সেই পথ খুঁজে পেতে ৪ দিনের এই মাহফিলে ওলামায়ে কেরামের বয়ান মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য তারা সকল মুসল্লির প্রতি আহ্বান জানান।
দিনব্যাপী আলোচনা ও বয়ান হয়। মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত জিকির আজগার হয় এবং মুসলিম উম্মহার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ঈসালে সাওয়াবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষি ও ধর্ম-বর্ণের লোক উপস্থিত হন।
বিভিন্ন ভাষায় বয়ান অনুবাদ
ফুরফুরার ইসয়ালে সাওয়াবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ১৫-২০ জন বিশিষ্ট আলেম বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান বাংলাতে হলেও উর্দু, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলাপাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন