দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হবার পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে বৃষ্টি বহন করে ধেয়ে আসা মেঘমালার কারণে গতকাল বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ঘন্টায়ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা বলা হয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরে ৬০-৮০কিলোমিটার বেগে বজ্র বৃষ্টি সহ ঝড়ে হাওয়া বয়ে যাবার আশংকায় ২নম্বও সতর্ক সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ফুট দৈর্ঘ্যের সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ৫৩মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাথে প্রায় ৪০কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া সহ ব্যাপক গর্জনের বজ্রপাত জনমনে ব্যাপক ভীতি ছড়ায়। গোটা মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবারহ ব্যবস্থায়ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। অনেক এলাকাতেই সন্ধের আগে বিদ্যুৎ ফেরেনি। আষাঢ়ের আসন্ন অমাবস্যার ভরা কটালে ভর করে আবহাওয়া পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকা রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া এবারের ঈদ বাজারেও চরম বিপত্তি সৃষ্টি করছে বার বার।
গতকাল দুপুর ১২টার আগেই দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ কালো করে মেঘমালা বৃষ্টি সাথে করে ধেয়ে এসে সাড়ে ১২টার পরে বজ্র-বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করে। টানা প্রবল বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকাই পানির তলায় চলে যায়। এমনকি বৃষ্টির পানিতে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকেও এক হাঁটু পানি জমে যায়। নগরীর বগুড়া রোড, সদর রোড, কাকলির মোড়, ফজলুল হক এভিনিউ ও নবগ্রাম রোড সহ বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাই ৬ইঞ্চি থেকে দেড় ফুট পানির তলায় চলে যায়। এসব রাস্তার পাশেই বড় ধরনের ড্রেন থাকলেও পার্শ্ববর্তী কতিপয় জামির মালিক রাস্তার ওপর বালু ফেলে রেখে ভবন নির্মাণ করছেন মাসের পর মাস। রাস্তার ওপর ফেলে রাখা বালু সাইড ড্রেন দিয়ে মূল ড্রেনে প্রবেশ করে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা প্রায় অবরুদ্ধ করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও বরিশাল মহানগরীর বেশরিভাগ রাস্তাঘাটই সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। নগর প্রশাসন এক্ষেত্রেও অনেকটাই স্বেচ্ছা অন্ধত্বে ভুগছে। মাথাভারী বরিশাল নগর প্রশাসনের দেড় হাজার শ্রমিক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী রাস্তাঘাট ও ড্রেনসমূহ নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণেও এ এ নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ক্রমশ বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার টানা প্রবল বর্ষণে সুস্থ নগর ব্যবস্থার পাশাপাশি ঈদ বজারও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। হাজার-হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন দোকান পাট ও বিপণী বিতানগুলোতে প্রায় ৩ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।
আবহাওয়া বিভাগের বুলেটিনে মৌসুমি বায়ু সারা দেশে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারী অবস্থায় থাকার কথা জানান হয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করার পাশাপাশি যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকার কথাও জানান হয়েছে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস সহ রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন