শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘জাতীয় অনলাইন নীতিমালা ২০১৭’ নামে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। এ আইন অসুসারে, দেশের অনলাইন গণমাধ্যম বা নিউজপোর্টালগুলোকে ২০১৪ সালের জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রস্তাবনা অনুসারে গঠিত সম্প্রচার কমিশনের কাছে থেকে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। একইভাবে অনলাইন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও সম্প্রচার কমিশনের অনুমোদন বা নির্ধারিত ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। ইতিপূর্বে খসড়া আইনের প্রস্তাবনায় প্রচলিত সংবাদপত্র এবং  বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন ভার্সনের জন্য নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হচ্ছেনা। পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সনের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের প্রেস এন্ড পাবলিকেশ্ন্স আইনে গৃহিত নিবন্ধনের শর্তসমুহ পালন করতে হবে। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুসারে ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন’র কাছ থেকে অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন এবং কমিশনের আইনানুসারে পরিচালনার কথা বলা হলেও কমিশন গঠনের কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি এবং অদ্যাবধি সম্প্রচার কমিশন গঠিতও হয়নি। প্রস্তাবিত অনলাইন আইনটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাস হওয়ার পরই কমিশন গঠিত হবে বলে জানা গেছে। দেশে বর্তমানে হাজার হাজার অনলাইন গণমাধ্যমের বেশীরভাগই যথেচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব অনলাইন গণমাধ্যমের কোন স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এদের প্রতি মানুষের আস্থা খুবই কম। অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থেই এই আইনগত বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন রয়েছে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জাতীয় সংস্কৃতি অনুসারে রাষ্ট্র বিনির্মানে গণমাধ্যমকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হয়। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এ যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি দেশে হাজার হাজার অনলাইন নিউজপোর্টাল গণমাধ্যম হিসেবে ক্রমে বিস্তৃতি লাভ করে চলেছে। বর্তমানে দেশে ২০ হাজারের বেশী অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে বলে জানা যায়। প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম আইনটি ২০১২ সালে প্রথমে আলোচনায় এসেছিল এবং এর বিধি বিধানে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে সরকারের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন ও স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।  সম্ভাবত: এসব বির্তক ও সমালোচনার মুখে সরকার সে সময় প্রস্তাবিত আইনটির অনুমোদন দেয়নি। মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব অনলাইন গণমাধ্যমের সরকারী স্বীকৃতির পাশাপাশি গ্রহণযোগ্যতা ও পাঠকপ্রিয়তার একটি জাতীয় মানদন্ড থাকা আবশ্যক। তবে প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সম্প্রচার কমিশন যেন স্বাধীন, দলনিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
দায়-দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম পরিচালনা দেশে অনাকাঙ্খিত সামাজিক-রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সব ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-  শীর্ষ স্থানীয় গুটি কয়েক অনলাইন গণমাধ্যম ছাড়া কোন নিউজপোর্টালেরই দেশব্যাপী নিজস্ব সংবাদদাতা না থাকায় তারা জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়বস্তু কপি, কাটিং-পেস্টিং করে চালিয়ে দিচ্ছে।পাঠক টানতে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো  অসমর্থিত তথ্য, অশ্লীল ছবি, ভিডিও ও কন্টেন্ট যোগ করতে দেখা যায়। প্রথম সারিতে থাকা জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালগুলোও কোন না কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠির অধীনে পরিচালিত হতে দেখা যাচ্ছে এবং এসব গণমাধ্যম নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতির পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে, সেই সাথে এরা তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের সাথে যুক্ত হচ্ছে। কোটি কোটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো মানুষের কাছে সহজেই পৌছে যেতে পারে। এই সম্ভাবনাময় গণমাধ্যমকে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠিগত স্বেচ্ছাচার থেকে মুক্ত রাখতে আইনগত নিয়ন্ত্রণ,  প্রয়োজনীয় নজরদারিসহ সামগ্রিক কর্মকান্ডের সরকারী স্বীকৃতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। অনলাইনে অলনৈতিক প্রোপাগান্ডা, ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো, ধর্মবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং অশ্লীলতা ছড়ানোর দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের গ্রহন করতে হবে। তবে অনলাইন গণমাধ্যম আইন বা অন্যকোন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও দায়িত্বশীল মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত বা খর্ব করার যে কোন উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম আইন বাস্তবায়নের আগে এর খুটিনাটি দিকগুলো বিবেচনায় এনে সংশোধন করতে হবে। নতুন অনলাইন গণমাধ্যম আইন এবং প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশন দেশের গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী ও আস্থাশীল করে তোলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই প্রত্যাশা আমাদের।   

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন