রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আদমজী ইপিজেড নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে সোনালী আঁশের অর্থনীতির অন্যতম প্রতীক, এক সময় এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল হিসেবে খ্যাত আদমজী পাটকলের জমিতে গড়েওঠা আদমজী ইপিজেড নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, সাবেক আদমজী পাটকলের শ্রমিক ইউনিয়নের মতই আদমজী ইপিজেডকে অশান্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই রফতানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকার শিল্পোদ্যোক্তা,মালিক-শ্রমিকদের মধ্যকার সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নস্যাৎ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে সরকারী দলের পরিচয়ধারী একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নানা রকম অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইপিজেড অঞ্চলের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজে বাধা প্রদান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তাদের ইচ্ছামাফিক  মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্য করা, তৈরী পোশাক কারখানার ঝুট, খাবার সরবরাহ, শ্রমিক নিয়োগসহ প্রভৃতি অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করছে সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগীরা এসব সন্ত্রাসীর কারো কারো বিরুদ্ধে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি বলে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অপতৎরতায় লিপ্ত সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ বা আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে।
শত শত একর জমির উপর গড়ে ওঠা বিশ্বের বৃহত্তম আদমজী পাটকল শত শত কোটি টাকা লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়নের হঠকারী আন্দোলন ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই মূলত দায়ী। আদমজী ইপিজেডেও বর্তমানে সাবেক আদমজী জুট মিলস ধ্বংসকারী শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেতাত্মা ভর করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। একদিকে সরকারী দলের নামধারী সন্ত্রাসী চক্র, অন্যদিকে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে আদমজী ইপিজেড শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের অজুহাতে একটি চক্র মালিক-শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট করতে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ উঠছে। দেশের রফতানীমুখী তৈরী পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পেছনে  দেশী-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশের অভিযোগ অনেক পুরনো। শ্রমিক ইউনিয়নের তৎপরতার নামে আদমজী পাটকলসহ দেশের পাটশিল্প ধ্বংসের পেছনেও দেশী-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্ত ও ইন্ধনের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশে যখন শ্রমিক অসন্তোষে লোকসানের মুখে একে একে বড় বড় সরকারী পাটকলগুলো বন্ধ হতে থাকে, ভারতে তখন নতুন নতুন পাটকল গড়ে উঠতে দেখা যায়। একসময় পাট ও পাটপণ্যের আন্তর্জাতিক রফতানী বাণিজ্যের কর্তৃত্ব বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের হাতে চলে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে তৈরী পোশাক শিল্পেও একই ধরনের বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের অস্থিতিশীলতা এবং অনিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাজার দখল করবে, এটাই স্বাভাবিক। আদমজী ইপিজেডের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিতে নেপথ্যের কুশীলবরা সাময়িক লাভবান হলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।
আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এই পাটকলে কর্মরত প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সিদ্ধান্তে আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিরোধীদল আওয়ামীলীগসহ তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারণার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। আদমজী পাটকলের জমিতে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তটি ছিল সময়োপযোগী ও ইতিবাচক। আদমজী ইপিজেডে ২২৯টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও ২০০৬ সাল থেকে গতবছর পর্যন্ত মাত্র ৬০টি রফতানীমুখী শিল্পকারখানা চালু এবং ১০টি কারখানা চালুর অপেক্ষায় ছিল বলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। এর মধ্যে বেশীরভাগই বিদেশী মালিকানাধীন শিল্প কারখানা (২৬টি), যৌথ মালিকানার কারখানা ১৬টি এবং দেশীয় মালিকানার কারখানা ১৮টি বলে জানা গেছে। বেশীরভাগ রফতানীমুখী শিল্প-কারখানা ২ হাজার বর্গফুটের একাধিক প্লট নিয়ে কারখানা তৈরী করেছে। কোন কোন কারখানা ১০টির অধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছে বলেও জানা যায়। বরাদ্দ পাওয়া অনেক প্লটে এখনো কারখানা নির্মাণ শুরুই হয়নি। এরই মধ্যে আদমজী ইপিজেডে ৪৬ হাজারের বেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ইপিজেডকে কেন্দ্র করে আরো অন্তত ১৫ হাজার মানুষের নানা ধরনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দকৃত প্লটগুলোতে পুরোমাত্রায় উৎপাদন শুরু হলে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়। গত অর্থবছরে ১৬৮৮.২৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এই ইপিজেড থেকে বিদেশে রফতানী হয়েছে। দেশের অন্য যে কোন ইপিজেড’র তুলনায় আদমজীতে শান্তিপূর্ণভাবে উৎপাদন কর্মকা- বজায় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং সামাজিক অস্থিরতার উত্তাপ আদমজীকে এতদিন স্পর্শ করতে না পারলেও এখন তা’ বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করে রফতানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি আদমজী ইপিজেডকে যেন আদমজী পাটকলের বাস্তবতা বরণ করতে না হয়, এই প্রত্যাশা সবার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MDROBUL ৩০ আগস্ট, ২০২০, ২:১৩ পিএম says : 0
সুরমা
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন