সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : নতুন নেতৃত্বের ধারা বিকশিত করার পথ তেরি করার লক্ষ্যে দীর্ঘ চৌদ্দ বছরের পুরানো কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। যুবলীগের কমিটির দায়িত্বশীল পদে পছন্দের যুবনেতা রাখা না রাখা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই চলছে সমন্বয়হীনতা। যার কারণে কুমিল্লা যুবলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন আ’লীগ নেতারা। ফলে বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির ঘোষণা।
চৌদ্দ বছরের পুরনো কমিটি বিলুপ্তের পর পাঁচ বছর পার হয়েছে কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা যুবলীগের। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম এ অঙ্গসংগঠনটি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগরে কোন কমিটি না থাকায় নেতৃত্ব ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। জেলা ও মহানগর কমিটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও কারা নেতৃত্বে থাকবে নাকি থাকবে না এনিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলে রয়েছে যুবলীগের নতুন কমিটি। ফলে সবমিলে ১৯ বছরেও কুমিল্লায় যুবলীগের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতার শিকার হচ্ছেন আগামীর নেতৃত্বে থাকার প্রত্যাশি যুবলীগ নেতারা। পাঁচ বছর আগে যেসব যুবনেতারা যুবলীগের কমিটিতে থাকার আশায় ক্যালেন্ডারের পাতা ছিড়েছেন, শেষ পর্যন্ত ওইসব যুবনেতাদের অনেকেই দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আশায় থাকা যুবনেতারা দিন মাস বছর পার করছেন। যুবলীগের নতুন কমিটিতে স্থান পেতে এখানকার অনেক যুবনেতা কেন্দ্রিয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে লবিংয়ের জন্য ঘুরেছেন। যতোবার পদপ্রত্যাশিরা ঢাকায় যেতেন ততোবারই হাতে থাকতো কুমিল্লার রসমালাইয়ের প্যাকেট ও খাদি সামগ্রী। পুরনো কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পাঁচ বছরে জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটি অনুমোদনের নামগন্ধ নেই। অথচ কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলার মধ্যে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, সদর দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি কেন্দ্রিয় যুবলীগের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর ২০১২ সালের ১৭জুন কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রæপের যুবনেতারা মাঠ গরম করে তোলেন। কমিটি বিলুপ্তের দুই বছর পর ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে নোয়াখালি যাওয়ার পথে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় হোটেল নুরজাহানে যুবলীগের কেন্দ্রিয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন তসলিম, চট্রগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রিয় সদস্য মজিবুর রহমানসহ বেশ ক’জন কেন্দ্রিয় নেতা কুমিল্লার যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন। এসময় কেন্দ্রিয় নেতারা কুমিল্লা জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটি নিয়ে আশার বাণীও শুনিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রিয় নেতাদের সেই আশার বাণী পরের দুই বছর দশ মাসেও বাস্তবায়িত হয়নি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগ ও মহানগর যুবলীগের নেতৃত্বে থাকতে পারে এমন নেতাদের নামও ওঠে এসেছিল নানা ফোরামে। তাদেরকে ঘিরেই কমিটির তালিকা করে পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রে। তালিকায় যেসব যুবনেতার নাম ছিল তাদের মধ্যে জেলা যুবলীগের কমিটির তালিকায় নির্মল কুমার দত্ত, কামরুল ইসলাম শাহিন, শাহজালাল মজুমদার চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরা, বঙ্গবাসী আবাদ, আকবর হোসেন ভূইয়া, লুৎফুর রহমানসহ আরো অনেকে। মহানগর যুবলীগের নেতৃত্বে থাকছেন এমন নেতাদের মধ্যে যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তারা হলেন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের সাবেক জিএস আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, অজিতগুহ কলেজের সাবেক জিএস সঞ্জয় রায়, শেখ রাসেল ম্মৃতি সংসদের সভাপতি বোরহান মাহমুদ কামরুল, মাইনুদ্দিন পারভেজ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী জিয়াউল হক মুন্না প্রমুখ।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে তালিকায় থাকা তিন চারজনের মধ্যে কাকে রাখা যায় এনিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল দুই তিন নেতার মনোভাবে ভিন্নতা থাকায় কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে পড়েছে। আর যুবলীগের জেলা কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার প্রভাব মহানগরেও পড়েছে। যার কারণে যুবলীগের জেলা ও মহানগর কমিটি সহসা অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন