মোঃ আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে : ঘর শত্রু বিভীষণ ভুগছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপি। অফার সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও একমাত্র ঘরের শত্রুদের কারণে এগুতে পারছে না জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক দলটি। যার ফলে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী নাসিমুল হক, উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কামরুল হুদা, সাবেক সভাপতি জিএম তাহের পলাশী, সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণ, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল হোসেন জুয়েল গ্রুপ সভা-সমাবেশ করছে। এছাড়াও ভিপি হানিফ ও কাজী দুলাল নামের দুটি গ্রুপের নামও শোনা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মুখে।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জানান, স্বাধীনতার পরে ১৯৯১ সালে চৌদ্দগ্রাম থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ আহম্মদ মজুমদার নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। তখন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালেও বিএনপি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন গফুর পাটোয়ারী। তখন এমপি নির্বাচিত হন আ’লীগ প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন জামায়াত নেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের। তার প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন আ’লীগ প্রার্থী মুজিবুল হক। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব এমপি নির্বাচিত হন। পরাজিত হয়েছেন জামায়াত নেতা ডাঃ তাহের। ২০১৪ সালে বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আ’লীগের প্রার্থী বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি নির্বাচিত হন। গত তিনটি নির্বাচনে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) থেকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হতে না পারায় তৃণমূলের কর্মীরা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তবে তৃণমূলের কর্মীদের পাঁচটি গ্রæপে ব্যবহার করছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী নাসিমুল হক, উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহŸায়ক মোঃ কামরুল হুদা, সাবেক সভাপতি ও পৌর বিএনপির আহŸায়ক জিএম তাহের পলাশী, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তোফায়েল হোসেন জুয়েল। গত রমজানে ইফতার মাহফিল ও ঈদ পরবর্তীতে পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট নেত্রীদের মুখে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পর পরই শুরু হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। আর চৌদ্দগ্রামের বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বারবার কোন অনুষ্ঠান বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের নেতার বিরুদ্ধে পোস্ট ও কমেন্ট লিখে চলেছে অহরহ। এরমধ্যে ‘ক’ অধ্যাক্ষর বিশিষ্ট এক নেতা ছায়ার মত থেকে অন্য নেতাকে দিয়ে গ্রæপিং করাচ্ছেন। আবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলছেন বিএনপিতে কোন গ্রæপিং নেই। অথচ-পর্দার অন্তরালে তিনিই সকল কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে গ্রæপিং প্রকাশ্য রুপ ধারণ করে। গত বছরের ২৭ জুলাই চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি জিএম তাহের পলাশী ও সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণের নেতৃত্বাধীন কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা কামরুল হুদাকে আহŸায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি। মাত্র তিনদিন পর কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে আহŸায়ক কমিটি বাতিল করা হয়। এর মাধ্যমে পলাশী ও কামরুল হুদার গ্রæপের প্রকাশ্য রুপ নেয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি রাতে জেলা বিএনপি আবারও কামরুল হুদাকে আহŸায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলমকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটি ও জিএম তাহের পলাশীকে আহŸায়ক ও কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ মজুমদারকে সদস্য সচিব করে পৌর বিএনপির আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দু’টি কেউ বাতিল না করলেও জিএম তাহের পলাশী নিজেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাবি করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সর্বশেষ গত ২৮ জুন বুধবার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামে বিএনপির ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে পৌর বিএনপির আহŸায়ক স্বীকার করে নেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি পৌর বিএনপির আহŸায়ক কমিটির মিটিং করেন।
উপজেলা বিএনপির ত্যাগী কয়েকজন নেতা জানান, ২০০৪ সালে কাজী নাসিমুল হক সভাপতি পদ ছেড়ে সিরাজুল ইসলামকে সভাপতি ও তাহের পলাশীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেন। এরপর কাজী নাসিমের সমর্থকরা কিছুটা ভেঙে পড়ে। কমিটি গঠনের কিছুদিন পর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বিদেশ চলে যান। ২০০৬ সালে ১/১১ ঘটনার সময় ভিপি হানিফ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও তাহের পলাশী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ওই সময় দেশের রাজনীতি কিছুটা স্থমিত হলেও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতি পুনরায় সচল হয়। তখন কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ডাঃ তাহেরের পক্ষে তাহের পলাশী সবাইকে মিলে মিশে কাজ করেন। ১/১১ এর সময় কামরুল হুদা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। তখন থেকে তার রাজনীতির মূল অধ্যায় শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৩ নভেম্বর চৌদ্দগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে আহŸায়ক কমিটির ১নং যুগ্ম আহŸায়ক জিএম তাহের পলাশীকে সভাপতি ও সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণকে সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী। এ কমিটি চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ওইদিন রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে মোঃ কামরুল হুদাকে আহŸায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলমকে সদস্য সচিব করে ঘোষিত ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি কাজ করেন। ইতোমধ্যে বর্তমান কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চৌদ্দগ্রামের বিএনপিতে গ্রæপিং প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। একে অন্যকে মেনে নিতে না পারায় তারা কোনভাবেই একমঞ্চে আসতে পারছে না। ফেসবুকে চলছে সকল গ্রæপের রাজনীতি। এক গ্রæপ অপর গ্রæপের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লিখছে। কেউ আবার তারেক রহমান মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন বলেও ফেসবুকে ঝড় তোলার চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি এই ঘরের শত্রæ বিভীষণ শেষ করতে পারলে আসন্ন নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারবে বলেও ধারণা রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন