শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ইসলাম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি নারীর অধিকার রক্ষা ও অগ্রযাত্রার পক্ষে সর্বদা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে অন্য যে কোনো ধর্মের চেয়ে ইসলামে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত পশ্চিমা কর্পোরেট মিডিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ নারী অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ধর্মকে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৬-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসলাম ধর্মই নারীর মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। ধর্মের নামে নারীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। নারীর ক্ষমতায়ন তথা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। একই সময়ে দেশের সরকারপ্রধান, সংসদ নেতা, সংসদের উপনেতা, বিরোধিদলীয় নেতা এবং স্পিকারের আসনে নারীদের অবস্থান করার নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। শতকরা বিরানব্বই ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশে ইসলাম একটি শক্তিশালী সামাজিক-রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করলেও নারীর ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণের অগ্রযাত্রায় ধর্মীয় নেতৃত্ব কখনো অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসলাম নারীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখায় ভূমিকা রাখছে, এমন অভিযোগ অবান্তর।
বাংলাদেশে চলমান সামাজিক বাস্তবতায় নারী ও শিশুদের প্রতি যে নিগ্রহ ও নিষ্ঠুরতার ঘটনা বেড়ে চলেছে, তার পশ্চাতে রয়েছে ধর্মহীনতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং বিজাতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন। বিশেষত আকাশ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় নৈতিকতার সাথে সঙ্গতিহীন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রচার-প্রসারের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে নারী লাঞ্ছনা ও নিষ্ঠুরতার ঘটনা সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় উৎসবে-সমাবেশে কোনো নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার নজির নেই। ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি নিষ্ঠাশীল ও পর্দানশিন নারীরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও সুরক্ষিত। পরকীয়ায় আসক্ত অথবা মাদকাসক্ত নারী-পুরুষের কাছে এমনকি নিজেদের সন্তানরাও নিরাপদ নয়। নারীকে অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনায় লিপ্ত হওয়ার অবারিত সুযোগ রাখাকে নিশ্চয়ই নারী অগ্রযাত্রা বা নারী প্রগতি হিসেবে গণ্য করা যায় না। পশ্চিমা সংস্কৃতি নারীকে পণ্যে পরিণত করেছে। স্বল্প পোশাকে নিজেদের আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে অধিকাংশ নারী ঘরে-বাইরে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত একটি জরিপ রিপোর্টে দেখা যায়, ব্রিটেনে ৯০ শতাংশ নারী রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় পরিচালিত একটি জরিপে ব্রিটেন ছাড়াও ২২টি দেশে রাস্তায় নারীর হয়রানির শিকার হওয়ার যে চিত্র পাওয়া যায়, তা উদ্বেগজনক। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীরা আক্রমণ ও হয়রানি থেকে বাঁচতে নিজেদের পোশাক পরিবর্তনের পাশাপাাশি যাতায়াতের রুট পরিবর্তনে বাধ্য হওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন।
ইসলামে নারী এবং পুরুষকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পরিধেয় আর তোমরা তাদের জন্য পরিধেয়।’ বাকারার ২৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরনের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের ওপরই জুলুম করবে।’ ইসলামের অগ্রযাত্রার সূচনালগ্ন থেকেই কোরআনের অনুশাসনের ভেতর থেকেই সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকা-ে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। শিক্ষা, অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ইসলাম এবং দেশের আলেম-ওলামারা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। তারা শুধু নারী স্বাধীনতার নামে নারীর বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। নারীবাদী এবং প্রগতিশীলতার দাবিদার একশ্রেণীর মানুষকে সব সময় এ দেশের আলেম-ওলামার এই ভূমিকার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ধর্মের নামে নারীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখার’ অভিযোগ তুলতে দেখা গেছে। ইসলামের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় ভীত হয়ে পশ্চিমা সমাজের ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত মিডিয়া একতরফাভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেও নারীর পর্দা ও হিজাবের বিরোধিতা করে ইসলামকে নারী প্রগতির অন্তরায় হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমা কর্পোরেট মিডিয়ার এসব অপ্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ দেশের একশ্রেণীর মুসলমানও নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট। তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ সচেতন আছে। দায়িত্বশীল কেউ তাদের ভাষায় কথা বললে সাধারণ মানুষ যেমন বিভ্রান্ত হতে পারে, একইভাবে বাইরের দুনিয়ায়ও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং ধর্মীয় নেতাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্ম হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেখানে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন, সেখানে ধর্মের নামে নারীর অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন