শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি ২০০১ সালের চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে -ওবায়দুল কাদের

শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত এখনও চলছে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নেতাকর্মীদের যে কোন মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ২০০১ সালের চেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে। হাজার হাজার নেতকর্মীর রক্ত ঝরবে, দেশ আবার অমানিশার অন্ধকারে ফিরে যাবে। আর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি ও তাদের দোসরদের প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, বার বার তাকে হত্যার চক্রান্ত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত এখনও চলছে।
তিনি গতকাল (রোববার) নগরীর বাকলিয়ায় একটি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রতিনিধি সভায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীর তৃণমূলের কয়েক হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন। তবে প্রতিনিধিদের কাউকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না দেয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্মেলনকে ঘিরে কনভেনশন সেন্টার ও আশপাশের এলাকাকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। কনভেনশন সেন্টারের সামনে নেতাদের বিলাসবহুল গাড়ির দীর্ঘবহর বর্ণিল ছবিসহ ব্যানার, ফেস্টুনে আভিজাত্য দেখা গেলেও সম্মেলনস্থল ছিল অনেকটা প্রাণহীন। নেতাদের বক্তব্যে মনোযোগী হয়ে শ্লোগান কিংবা করতালির চেয়ে জটলা বেঁধে সেলফি তোলা আর খাওয়ার টেবিল দখল করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। আওয়ামী লীগের চেয়ে প্রতিনিধি সভায় ছাত্রলীগ আর যুবলীগের উপস্থিত দেখা গেছে বেশি। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কনভেনশন হলের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে দফায় দফায় হট্টগোল আর হাতাহাতিতে মেতেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। সাউন্ড সিস্টেমের গোলযোগে বিরক্ত হয়ে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রতিনিধি সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির শত্রু আওয়ামী লীগ না। তাদের এখন প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা। তাকে হঠাতে পারলেই বিএনপির শান্তি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ। বিদেশে বসে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর ঐক্যবদ্ধ না হলে, আওয়ামী লীগ দূর্বল হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ভয়ংকর হবে পরিস্থিতি। আবার ২১ আগস্টের মতো হামলা হবে। ২১ হাজার নেতাকর্মীর রক্ত ঝরবে। খুন, লুটতরাজ, রাহাজানি, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ফিরে আসবে। ২০০১ সালের সে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আর দুঃসহ স্মৃতি মনে করে দলের ভেতরে অনৈক্য, কলহ, বিভক্তি নিরসনের আহ্বান জানান তিনি। ঘরের মধ্যে ঘর, মশারীর মধ্যে মশারী খাটাবেন না। উপস্থিত নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি সবাইকে হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তুলে তার আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সাড়া দেন।
এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা পৌঁছে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন থেকেই মাঠে নেমে যেতে হবে। ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন করতে হবে। দলে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দলে নতুন সদস্য সংগ্রহের নামে কেউ যাতে নিজের পক্ষ ভারী করতে খারাপ লোককে দলে না নেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই সুযোগে যেন কোন স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অনুপ্রবেশ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখে শুনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি নিজেও নিজেকে প্রার্থী দাবি করছি না। আশা আছে প্রার্থী হব। তবে দল যদি মনোনয়ন দেয়। অমুকের সবুজ সংকেত পেয়েছি এমন কথা বলে যারা মাঠে নেমে পড়েছেন তারা আওয়ামী লীগের বারোটা বাজাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার ব্যাপারে নেত্রীর কাছে রিপোর্ট রয়েছে। তিনি যাকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে করবেন তাকে মনোনয়ন দেবেন। এখনো আমাদের সবার প্রার্থী নৌকা, নৌকার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের অসুস্থ ও অস্বচ্ছল নেতাকর্মীদের প্রতি দলের নেতাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অনেকে ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে খরচ শুরু করে দিয়েছেন। টাকা-শাড়ি বিলি করছেন, একটু দলে যারা দুস্থ অস্বচ্ছল তাদের দিকেও খেয়াল করুন। সভানেত্রীর ফান্ড রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দলে যারা অস্বচ্ছল তাদের আমরা সহযোগিতা করতে চাই। দল করার কারণে যারা দরিদ্র হয়েছেন তারা যাতে ভাবতে না পারেন এখন আর তাদের প্রয়োজন নেই। তাদের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে।
প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, যারা এমপি হয়েও আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানে না ভবিষ্যতের তারা মনোনয়ন পাবেন না। প্রতিনিধি সম্মেলনে সাতকানিয়ার এমপি আবু রেজা নদভীসহ কয়েকজন এমপি তাদের বক্তৃতায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করায় উষ্মা প্রকাশ করে হানিফ বলেন, সংসদ সদস্য হলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস জানতে হবে। ফুটবল খেলার জন্য হায়ার (ভাড়া) করে যেমন খেলোয়াড় আনা হয় আওয়ামী লীগও নির্বাচনের সময় এমপি পদে কিছু লোককে হায়ার করে এনেছে। তবে সামনে জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকবে না, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সাথে যাদের সম্পর্ক নেই তাদের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দলে বিভক্তির চেষ্টা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সুদিনে ঐক্য থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্দিনে তৃণমূলের ঐক্য ও সংহতি প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনাশেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে না, তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারে এমন শক্তি পৃথিবীতে নেই। দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমালোচনা শুনতে হবে। কেউ সমালোচনা করলে তাকে পুলিশি নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেয়া যাবে না।
ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু দলীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া। বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও আবু রেজা নদভী। প্রতিনিধি সভা সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
প্রতিনিধিরা সবাই শ্রোতা
প্রতিনিধি সভা হলেও কাউকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা ছিলেন শ্রোতা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের ও মাহবুবুল আলম হানিফ। ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিশাল উপস্থিতি অথচ তৃণমূলের কেউ বক্তব্য দিতে পারেনি। অনুষ্ঠানের প্রাণভোমরা তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। অন্তত ৮টি উপজেলা থেকে ৮ জনকে ২ মিনিট করে বক্তৃতার সুযোগ দেয়া যেত। ওবায়দুল কাদের বলেন, কারো পক্ষে-বিপক্ষে যায় কিনা এ আশঙ্কা থেকে তৃণমূলকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় প্রতিনিধিরা করতালি দিয়ে তার বক্তব্যের সমর্থন জানান। তৃণমূলের কাউকে বক্তব্য দিতে না দেয়া দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুল আলম হানিফ। ওই দুই নেতা সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের কথা শুনতে বর্ধিত সভা করার পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হলেও তৃণমূলে আগের বিরোধ রয়ে গেছে। বিরোধ আর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই তৃণমূলের কাউকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। তবে দুই পক্ষই গতকাল প্রতিনিধি সভা ও এর আশপাশে ব্যাপক শোডাউন করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
S. Anwar ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:৪৬ এএম says : 0
আপনারাতো ১৯৭৪ কেও ম্লান করে দিয়েছেন। আপনি সম্ভবত সে সব বাস্তব দৃশ্য নিজ চোখে দেখেন নি।
Total Reply(0)
S. Anwar ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:৫২ এএম says : 0
আপনারাতো ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষকেও ম্লান করে দিয়েছেন মন্ত্রীজী। আপনি সম্ভবত সে সব দিনগুলোর বাস্তব দৃশ্য নিজ চোখে দেখেন নি।
Total Reply(0)
Rabbani ১৭ জুলাই, ২০১৭, ২:৪৭ এএম says : 0
আওয়ামীলীগ এর এই কথা মানায় না।। যারা নিজেরাই গনতন্ত্রের হত্যাকারী,, বড়ই হাস্যকর
Total Reply(0)
Md Abdulla Alamin ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১১:০৭ এএম says : 0
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পরবে,তা যেদিনই আসুক।
Total Reply(0)
Mohammed Azim ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১১:০৭ এএম says : 0
সৎ মানুষের ভয় নাই। তারপরও কেনোও ভয়?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন