বিশেষ সংবাদদাতা : কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়ার পর দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত তার জিজ্ঞাসাবাদ চলে বলে ডিএমপির ডিসি (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান জানান। জানা গেছে, অপহরনের ঘটনায় আদালতে ফরহাদ মজহারের দেয়া জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে গরমিল থাকায় তাকে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ) আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সঙ্গে আমাদের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের মিল না থাকায় তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের হাতে যে তথ্য এসেছে, তাতে মনে হচ্ছে তিনি অপহৃত হননি। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং সেই সঙ্গে উনার কার্যকলাপ ও আমাদের কাছে থাকা তথ্যের মধ্যে কোনো মিল নাই। এই বিষয়টি উনার মাধ্যমে যাচাই করা হবে। তিনি যদি সত্যিকার অর্থে অপহৃত হয়ে থাকেন, তাহলে একমাত্র সাক্ষী তিনি নিজেই এবং যারা অপহরণ করেছে তারা। এই পর্যন্ত তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি অপহৃত হননি। এবিষয়ে পুলিশের পরবর্তী করণীয় জানতে চাইলে বাতেন বলেন, কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে, মিথ্যা অভিযোগে মামলা করলে পেনাল কোডের (দন্ডবধি) ২১১ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে। সব প্রক্রিয়া যাচাই করে দেখে আইনগতভাবে কীভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় তা দেখা হবে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কবি ও লেখক ফরহাদকে শ্যামলীর হক গার্ডেনের বাসা থেকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে ‘গরমিলের’ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
১৩ জুলাই পুলিশ মহা পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্তে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের মনে হয়েছে, ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় খুলনা গিয়েছিলেন, অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার দিন কয়েকবারের টেলিফোন কথোপকথনের এক পর্যায়ে ফরহাদ মজহার তার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে অপহরণের কথা বলতে মানা করেন বলেও দাবি করেন আইজিপি।
উদ্ধারের পর জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার বলেন, তাকে অপহরণ করে খুলনায় নেয়া হয়েছিল। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। এই অপহরণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সব মহলে আলোচনার মধ্যে তদন্তের সূত্র ধরে গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে নিয়ে আসে পুলিশ। নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য দাবি করে এই নারী জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন এবং ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ জুলাই) ভোররাতে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে জানান, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। পরে তার স্ত্রী আদাবর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে র্যাব-৬ যশোর নওয়াপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। জবানবন্দি দেয়ার পর তিনি নিজ জিম্মায় যাওয়ার আবেদন করলে শুনানি শেষে তার এই আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ফরহাদ মজহারের অপহরণ মামলা তদন্ত করছে ডিবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন