ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : তৈরি পোশাক শিল্পে ইপিজেডের বাইরের কারখানায় দীর্ঘ দিন ধরেই সরাসরি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে আসছে বিদেশিরা। কিন্তু বেশ কিছু জটিলতার কারণে এতো দিন বিদেশিদের বিনিয়োগের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশে। তবে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। তাই এখন থেকে ইপিজেডের বাইরেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পোশাক কারখানা স্থাপন করতে পারবেন। তবে শর্ত মেনেই বিদেশিদের বিনিয়োগ করেতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, পোশাকশিল্পে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে আমরা বিরোধী নয়। তবে যে সব খাতে স্থানীয় ভাবে বিনিয়োগ করা সম্ভব, সেই সব খাতে বিদেশিদের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। বিশেষ করে কাটিং ও মেকিংয়ের কাজে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হলে পোশাক খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে তাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করা উচিত। ইপিবির মাধ্যমে ইউডি সনদ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেছেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাজ হচ্ছে রপ্তানি কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয় নিয়ে কাজ করা। এ কাজ বিজিএমইএর পক্ষে করা সম্ভব। সূত্র জানায়, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে দেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, পোশাকশিল্পকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারাই এবং তারাই এ খাতে বিনিয়োগের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর সর্বশেষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে জাপান অ্যাম্বাসি, জেট্রোর প্রতিনিধি ছাড়াও বিজিএমইএর প্রতিনিধি অংশ নেন। বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত বিজিএমইএর প্রতিনিধিরা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিতে সম্মত হন। বিজিএমইএ এখন চাইছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের সংগঠনের সদস্য হওয়া সাপেক্ষে এই দেশের পোশাকশিল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
জানা যায়, সরকারের অবস্থান হচ্ছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠান যারা বিজিএমইএর সদস্য হবে না তাদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ইউডি সুবিধা দেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা দেওয়ার অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় উৎপাদনকারীরা চায় না বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পোশাকশিল্পে বিনিয়োগ করুক। কারণ তারা মনে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের তুলনায় শ্রমিকদের বেশি মজুরি দেবে, যা এ শিল্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
বিজিএমইএর আরেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান জানিয়েছেন, আইনগতভাবে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আটকে রাখতে পারি না। এক্ষেত্রে ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) সুবিধা নেওয়ার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিজিএমইএর সদস্য হতে হবে। পোশাক খাতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) হচ্ছে এমন একটি সুবিধা যা কেবল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য হলে পাওয়া যায়। ইউডি সার্টিফিকেট নিয়ে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয়, সে কারণে তারা ইউডি সার্টিফিকেট নিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না। এখন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সদস্য হওয়া সাপেক্ষে ওই সুবিধা লাভ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন