তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমানের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল থেকে তাঁরা এই দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সকাল নয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হন। সিদ্দিকুরের চিকিৎসার জন্য তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা ‘পুলিশের কালো হাত ভেঙে দাও’, ‘সিদ্দিকের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল সরদার বলেন, অবিলম্বে সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। আর এই ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। যে পুলিশ তাঁর ওপর এই হামলা করেছে, ভিডিও দেখে সেই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি পরে সায়েন্স ল্যাব মোড় হয়ে আজিমপুরে ইডেন কলেজে যায়। সেখানেও তাঁরা বিক্ষোভ করেন এবং স্লোগান দেন। পরে শিক্ষার্থীরা আবার নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে ফিরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৪ ও ২৫ জুলাইও একইভাবে একই দাবিতে বিক্ষোভ করা হবে। আমাদের দাবি না মানা হলে কলেজগুলোতে ধর্মঘট, অবরোধ এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ারও দাবি করেন তিনি।
সিদ্দিকুর স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তাঁর দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’
ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দা গ্রামে সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন বাবা মারা যান। মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে লেখাপড়া করান সিদ্দিকুর ও আর তাঁর বড় ভাইকে। মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী। হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগাতে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন