শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কার্গো পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাসাধিক কাল পূর্বে নিরাপত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের কার্গো বিমান প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরমধ্যে ১ মাস হয়ে গেল। এখন ব্যবসায়ী এবং বিমান কর্র্তৃপক্ষ আশা করছিলেন যে, সহসাই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। ঠিক তখনই বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো বাংলাদেশের কার্গো বিমানের ওপর নতুন আরেকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে কোনো কার্গো বিমান অতঃপর ইংল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ, সেই একটিই। আর সেটি হলো নিরাপত্তা। বিমান ও বেসামরিক বিমান চলাচলের সাথে সংশ্লিষ্ট মহল আশঙ্কা করছেন যে, যুক্তরাজ্যের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমানই নয়, বরং কাতার, কুয়েত, সউদিয়া, এমিরেটস, সিঙ্গাপুর, ক্যাথে প্যাসিফিক সিঙ্গাপুর প্রভৃতি এয়ার লাইন্সের কার্গো বিমানও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। কারণ, এসব বিমানেও বাংলাদেশের কার্গো পরিবাহিত হয়। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে তৈরি পোশাক এবং শাক-সবজিসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রফতানিমুখী পণ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ইনকিলাবের এক খবরে প্রকাশ, যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশ শুধুমাত্র আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দেশটির ভাবমর্যাদাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষুণœ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কার্গোপণ্য ইউরোপ, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যায়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের এ নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়াতে কার্গোপণ্য পাঠানো বন্ধ থাকায় শাহজালাল বিমান বন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে আটকা পড়েছে রফতানিকারকদের কয়েক শ’ কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু এ ব্যাপারে যেন কারো কোন মাথাব্যথা নেই। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, শুধুমাত্র পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবই নয়, প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র এবং দক্ষ জনবল না থাকার কারণেও যুক্তরাজ্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার একটি বাংলা সহযোগীর খবরে প্রকাশ, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে শীঘ্রই ঢাকা ও জাপানের সরাসরি ফ্লাইটেও কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। ওই খবরে আরো বলা হয় যে, ইংল্যান্ডের সুপারিশ অনুযায়ী কার্গো, ট্রাফিক ও বিএফসিসি শাখায় দক্ষ ও নিয়মিত জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য ওয়ার্কিং পেপার তৈরি করা হলেও বোর্ড সাব কমিটির নিষেধাজ্ঞা থাকায় জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। বিমান থেকে এ ব্যাপারে চিঠি দেয়া হলেও মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট জবাব না দিয়ে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছে, যার কারণে গত ২ মাসেও কার্গো শাখায় নিয়মিত জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।
অভিজ্ঞমহল এ ব্যাপারে বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন যে, নিরাপত্তার অভাব এবং একই সাথে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবের যে কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে হয়তো অনেক সত্যতা রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি একথাও সত্য যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিও এখানে কাজ করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে নিজ দেশের যাত্রীর আগমনের ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করে অস্ট্রেলিয়া। উপলক্ষ ছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। পরবর্তীকালে দেখা গেল, দুই জন বিদেশী নাগরিকের হত্যা কা-। তখন আর এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি কোরিয়ার মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তারাও তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যখন অস্ট্রেলিয়া প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করে তখন কিন্তু এদেশে কোন বিদেশী নাগরিক খুন হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞার পর পরই কয়েক দিনের ব্যবধানে ২ জন বিদেশী নাগরিক খুন হন। এরপর সেই নিষেধাজ্ঞা বলতে গেলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এখন কার্গো পরিবহনের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলো। পত্রিকান্তরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, শীঘ্রই জাপানও অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। সাম্প্রতিক অতীতের মতো আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোরিয়াও অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এসব ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক সংকেত পাঠাছে। সেই সংকেত কী সেটি বোঝার ক্ষমতা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নেই বলে মনে করার কোন কারণ নেই। সেই জন্যই আমরা মনে করি যে, এসব ঘটনাকে হাল্কাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে হ য ব র ল অবস্থা। সেখানে যদি বিদেশের  আচরণ হয় নেতিবাচক তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। কিন্তু দেশের স্বার্থ বিরোধী এবং নেতিবাচক অবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। এসব ঘটনার ফলে দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমাদের ভাবমর্যাদা যতখানি নষ্ট হয়েছে সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেই কাজটি করতে হবে যৌথভাবে। একটি বিষয় কিছুতেই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না যে, বিদেশীরা বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া এবং পাশ্চাত্যে পশ্চিমাদের অনুসারীরা কেন বাংলাদেশের সাথে নেতিবাচক আচরণ করছে। বিষয়টি কিন্তু দিনের পর দিন জটিল আকার ধারণ করছে। প্রথমে ছিল ট্রাভেল ডকুমেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা, এখন আবার পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা। ২দিন পর যদি আরো বড় ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে আমরা অবাক হবো না। প্রকৃত কারণটি উদঘাটন করে সরকারকে অবিলম্বে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে শুধু বিমান মন্ত্রণালয় নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাথে নিয়ে তিনটি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন