রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

চীন-ভারত দ্ব›দ্ব : বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিকিম সীমান্তে চীনের রাস্তা তৈরি নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। চীন দোকলাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ শুরু করলে এ উত্তেজনা শুরু হয়। অঞ্চলটি চীনের কাছে ডংলং নামে পরিচিত। ভুটানের ঘনিষ্ট মিত্র ভারত চীনের এই রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করে। ভুটানের সাথে ১৯৪৯ সাল থেকে ভারতের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যা ২০০৭ সালে নবায়ন করা হয়। চুক্তির আওতায় ভুটানকে নিরাপত্তা দেয়া ও বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়ার মতো বিষয় রয়েছে। ভারত মনে করছে, চীন রাস্তাটি নির্মাণ করলে সে এমন এক জায়গায় পৌঁছে যাবে যা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। এই রাস্তার কিছু দূরেই রয়েছে ভারতের একটি করিডোর। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারত তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে মূল ভূখন্ডের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটির উপর চীন ও ভারত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। চীন দাবী করছে সে তার ভূখন্ডে রাস্তা নির্মাণ করছে এবং ভারত সেখানে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। চীন ভারতকে নিঃশর্তভাবে তার সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতকে তার অন্যায় সংশোধন, উস্কানি বন্ধ ও সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি রক্ষার জন্য চীনের সাথে যৌথভাবে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশকেই তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। চীন ও ভারতের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে একটি যুদ্ধন্মোখ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশই যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ সীমান্তে বাঙ্কার নির্মাণসহ সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে। 

ভারত ও চীনের মধ্যকার টানটান উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যদি যুদ্ধ বেধে যায়, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনবে। প্রতিবেশি দেশগুলো এই দুই দেশের যুদ্ধের মধ্যে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হবে। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়ে রেখেছে, ভারত ও চীনের মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে তবে সে হাতগুটিয়ে বসে থাকবে না। চীনের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য সে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এমন কিছু ঘটলে উপমহাদেশে যে এক ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। উভয় দেশের মধ্যে এখন যুক্তি ও পাল্টাযুক্তি চলছে। পর্যবেক্ষকরাও তাদের বিভিন্ন লেখনিতে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। ওয়াশিংটনস্থ ইনস্টিটিউট ফর চায়না-আমেরিকা স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো সৌরভ গুপ্ত বলেছেন, এবার ভারত চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব লংঘন করেছে এবং সংলাপের পূর্বশর্ত হিসেবে তাকে অবশ্যই অনুপ্রবেশ করা স্থান থেকে সরে আসতে হবে। চীনের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি বলেছেন, দোকলাম সমস্যায় কে ঠিক আর কে ভুল তা সুস্পষ্ট। ভারতের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তারা চীনা ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেছেন, দোকলাম থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থার সমাধান করা সহজ। চায়না ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সাউথ এশিয়া স্টাডিজের গবেষক লান জিয়ানজু বলেছেন, ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে নির্ধারিত সীমান্ত অতিক্রম করে ভুল করেছে এবং পরিস্থিতি সহজ করার জন্য তার সৈন্য প্রত্যাহার করা উচিত। অন্যদিকে ভারত একতরফা সমাধানে আগ্রহী নয়। তার মনোভাব হচ্ছে, চীনকে রাস্তা বানানো বন্ধ করতে হবে এবং সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উভয় দেশই স্ব স্ব অবস্থানে অনড় রয়েছে। হুমকি পাল্টা হুমকির মাঝেই তারা সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যুদ্ধ বেধে গেলে উভয় দেশ হয়তো পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারেও দ্বিধা করবে না। এর পরিণতি কী ভয়াবহ হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। এখন পর্যন্ত এ সংকটের নিরসন কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কালক্ষেপণ না করে উভয় দেশকেই আলোচনার টেবিলে বসা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা ও সমঝোতায় পৌঁছা খুবই সম্ভব। এক্ষেত্রে উভয় দেশকেই ন্যায়সঙ্গত ছাড় দেয়ার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। গোয়ার্তুমি বা গোঁ ধরে বসে থাকলে কারো জন্যই পরিণতি ভাল হবে না।
ভারত ও চীনের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত যুদ্ধ শুরু হলে, দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ উভয় দেশের সঙ্গেই বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ পরশক্তিধর দেশগুলো যুক্ত হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে। পরাশক্তিধর দেশগুলোর এই যুদ্ধের হুমকিতে সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত ও চীনের প্রতিবেশি দেশগুলো। যুদ্ধ বেধে গেলে প্রাণহানিসহ মানবিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে। উভয় দেশের প্রতিবেশি দেশগুলো নিশ্চয়ই শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, কীভাবে উভয় দেশের ন্যায়ানুগ স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে সমাধান করা যায়, তাই প্রত্যাশিত। চীন ও ভারতের ঘনিষ্ট বন্ধু দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানও তাই হওয়া উচিত। কারো পক্ষাবলম্বন নয়, সমঝোতার নীতি সমর্থনই আমাদের কাম্য। সবার সাথে বন্ধুত্ব-এই নীতিতেই অটুট ও অবিচল থাকা বাঞ্চনীয়। চীন ও ভারত উভয়েই বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশি ও মিত্র। চীন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও রয়েছে সদ্ভাব। ভারত ও বাংলাদেশের উভয় সরকারই দাবি করে, দু’দেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকে চীন-ভারত দ্ব›েদ্ব তার নিজ স্বার্থেই নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mobarak hossain ৩০ জুলাই, ২০১৭, ৭:২১ এএম says : 0
YEs ALl Right
Total Reply(0)
Md. Harun-ur-Rashid ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১০:৫২ এএম says : 0
India fight with us for our liberation war against Pakistani armies.China helped Pakistan against our nation. So how Bangladesh play neutral role ? Minimum pay great sympathy infavor of India.
Total Reply(1)
Ashik ৩০ জুলাই, ২০১৭, ২:৫২ পিএম says : 4
If Bangladesh go with india. ...it will bring huge destruction for us
ABU ABBASI ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৯ এএম says : 0
Please do not think about war between China and India. For this Donald Trump is waiting for North Korea.You know N .Korea is a mad person leader and the same applies for u s.His arsonal is enough to wipe out U S A. All calculations will be proved . His threats are genuine. Us has already confirmed North Korean ability and has sent B 52 in South Korea. Any attack on North Korea will be a nuclear havoc on America by North Korea and Russia. The north America no escape from being a nuclear disaster within few minutes. The second attempt will not be there for America. India should be cautious about China too. Bangladeshis should be neutral and ask India to go back. war is no good for all of us. There is another country beyond the Himalyan Mountain
Total Reply(0)
Shahabuddin Akand ৩০ জুলাই, ২০১৭, ১:০৭ পিএম says : 0
এই সময়‌ে বাংলাদ‌ে‌শ ভারত‌ে‌র পক্ষ ন‌ে‌বে ।
Total Reply(0)
Milonmia ৩০ জুলাই, ২০১৭, ৩:১১ পিএম says : 0
আমি এক বাংলাভাষি## হিন্দি উরদু ভাল বাসি## ইংলিশ জানি লিটল হাফ## চাইনিজ, ওরে বাপরে বাপ।## ব্রম্মপূত্রে বাড়ছে জল## ড্রাগন ভায়া করছে ছল## অগ্নিমূখে তূলছে ফনা## গিলতে ভূমি সাগর লোনা।## হাতি দাদা বাশের ফাটায়## চিকেন নেকে বিধছে কাটায়## বুনো ছাগলের পথটি ভুলো## নাকের বদল নিচ্ছে মূলো।## যদি গায়ে ঢাকাত পরে## মিলে মিশে সব্বে লড়ে## ড্রাগন টাকে রুখতে চাও## SAARC কে আবার জিয়াও।##
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন