শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অবৈধ যানবাহন চলছেই

পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক, খুলনাঞ্চলের মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮জন নিহত, আহত অর্ধশত : মহাসড়কে গড়ে উঠেছে অবৈধ ও অঘোষিত ষ্ট্যান্ড


আবু হেনা মুক্তি : বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ও অবৈধ ঝুঁকিপূর্ন যানবাহন চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশ যেন নীরব স্বাক্ষী গোপাল। প্রতিদিন ঝরছে অসংখ্য তরতাজা প্রাণ। বাগেরহাট থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত নসিমন করিমন ইজিবাইক আলম সাধু সহ ঝুঁকিপূর্ন থ্রিহুইলার যানবাহন চলাচল এখন অপ্রতিরোধ্য। আর অসাধু পুলিশ সদস্যরা মাশোহারা নিয়ে নিরাপদ সড়ককে করছে রক্তাক্ত। গত এক সপ্তাহে এই মহাসড়কে ঝরেছে প্রায় ৮জনের তরতাজা প্রান আর আহত হয়েছে অর্ধশত।
সূত্রমতে, বাগেরহাট-খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ন স্থান সমূহের মধ্যে ডুমুরিয়া, কাঠালতলা, চুকনগর, আঠারমাইল, পাটকেলঘাটা অন্যতম। এখানকার প্রতিটি বাজারে তিন চাকা বিশিষ্ট যানবহন চাপে পরিবহন চলাচল দু:স্কর হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন মোড়ে সকাল সন্ধ্যা এসকল অবৈধ যানবাহনের কারণে তীব্র যানজট লাগে। চুকনগর, আঠারোমাইল, ডুমুরিয়ার মত গুরুত্বপূর্ন স্থানে এ যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এখানে যেন দেখার কেউ নেই। সারাবছর জুড়ে এসব স্থানে চলছে শুভংকরের ফাঁকি। আর সাথে সাথে মহাসড়কের ওপর জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ও অঘোষিত ষ্ট্যান্ড। আর এসব ষ্ট্যান্ডগুলোতে চলছে দ্বিমুখী চাঁদাবাজি। খর্ণিয়া পুলিশ ফাড়ির কতিপয় অসাধু সদস্য ও বিভিন্ন স্থানে সমিতির নামে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে গেল বছর খর্নিয়ার অঙ্গরদা এলাকায় নছিমনের ধাক্কায় তরুণ সাংবাদিক বাবুল হাসান (২৭) নিহত হয়। এছাড়া কৈয়া ব্রিজ থেকে সাতক্ষীরা মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি-হুইলার, ইজি বাইক নামক যানবহন অবাদে চলাচলের কারনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে।
স¤প্রতি হরিণটানা থানাধিন রাজবাঁধ এলাকার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ ছাত্র অমিত ও ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছে। এছাড়া খুলনা থানাধিন ১৬৮/২১, বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা মৃত আমজাদ তালুকদারের ছেলে ইজিবাইক চালক রবিউল ইসলাম ওরফে গুলশান (৪৫) একই সময় নিহত হয়।
অপরদিকে, বাগেরহাটের মোল্লাহাটে ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়ি চালনাকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের দোকান চাপা’র ঘটনায় ঘুমন্ত দোকানী নিহত ও চালক আহত হয়েছে। খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের মাদ্রাসা ঘাট নামক স্টান্ডে গত শনিবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দোকানী মিশকাত মুন্সি (২৮) গাওলা গ্রামের হেকমত মুন্সির ছেলে। আহত চালক মোঃ আলমগীর (৩০) খুলনা জেলার ফুলতলা থানাধীন সরদার পাড়া এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার অধিকাংশ সড়ক মহাসড়ক জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ সড়ক মেরামত বা মজবুতিকরণ করে সংস্কার করা হচ্ছে না। সংস্কারের নামে পাথরের খোয়া দিয়ে যে প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। তা আরও বিপদ ডেকে আনছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙ্গে যাওয়া সড়কে গর্তে খোয়া ঢেলে দিয়ে নামমাত্র পীচের প্রলেপ দিচ্ছে। যা একদিকে দিয়ে আসতে আসতে অন্যদিক দিয়ে উঠে যাচ্ছে। ওই পীচ ও খোয়া উঠে গিয়ে সড়কের জরাজীর্ন সড়কের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে যানবাহন সোজাপথে চলতে পারছে না। একে বেকে সড়কে চলতে হচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত খুলনায় আট জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এর সর্বশেষ শিকার খুলনার কলেজ ছাত্র অমিত সরকার ও ইজিবাইক চালক মোঃ রবিউল ইসলাম।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জরাজীর্ন সড়ক, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অবৈধ থ্রিহুইলার ও বৈরী আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, খুলনার সড়ক মহাসড়কগুলো খুবই জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অদক্ষ চালক ও ফিটনেস বিহীন যানবাহনের কারনেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির বিভাগীয় মহাসচিব আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, খর্নিয়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ কামরুল ইসলাম ও কতিপয় পুলিশ সদস্যের মাশোহারা গ্রহণের অভিযোগ এখন আলোচিত ঘটনা। তদন্তপূর্বক এসব দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন যেন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ অবৈধ যানবহনের চালকদের মাঝে মধ্যে ধরে ফাইন নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয়। যে সকল তিন চাকা বিশিষ্ট যানবহনের চালক টাকা দেয় না তাদেরকে ধরে মাঝে মধ্যে জরিমানা করে এবং মাসিক মাসোয়ারার অর্ন্তভুক্ত করে। না হলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না। চুকনগর বাজারের সামনে খর্নিয়া নামক হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ি থাকলেও এরই সামনে বাজার ঘিরে যেন তিন চাকা যানবহনের ষ্টান্ড, যা চোখে পড়ার মত।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ সুপার সাজিদ হোসেন বলেন, আমরা ৩ চাকা যানবাহন জেলা পুলিশের সহযোগীতায় সর্বদা ধরছি এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সর্বদা আমাদের পর্যবেক্ষন করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন