সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতীয় গরুর প্রয়োজন নেই

| প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত বছর কোরবানির ঈদের চাহিদা দেশীয় গরু দিয়েই পূরণ হয়েছিল। ভারতের তরফ থেকে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেশের খামারিদের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। তারা গরু বিক্রি করে যেমন লাভবান হয়, তেমনি পশু পালনেও বেশ উৎসাহী হয়ে উঠে। এবারও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এবারও দেশীয় খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী গরু লালন-পালন করেছে। এসব গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত। বন্যায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও ঈদে গরুর সংকট হবে না বলে খামারিরা নিশ্চিত। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২ কোটি ৩৭ লাথ ৭৮ হাজার গরু এবং ২ কোটি ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার ছাগল ও ১৪ লাখ ৫৬ হাজার মহিষ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ গরু ও ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, এবার প্রায় ১ কোটি পশু কোরবানি হবে। দেশে যে পরিমাণ গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে, তা দিয়েই স্বচ্ছন্দে মানুষের চাহিদা মোতাবেক কোরবানি হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ভারত বা মিয়ানমারের গরুর প্রয়োজন নেই। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইতোমধ্যে সীমান্ত দিয়ে যেভাবে পালে পালে ভারতীয় গরু প্রবেশ করা শুরু করেছে, তাতে দেশীয় খামারিরা প্রভুত ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে। তাদের উৎপাদিত গরুর দাম কমে যেতে পারে। তারা পশু পালনে নিরুৎসাহী এবং হতাশ হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পরিবার গরু পালন করছে। পশুপালন দেশের জন্য একটি বিরাট অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হচ্ছে। কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরের আমিষের চাহিদাও দেশীয় গরু দিয়ে মিটানো সম্ভব। প্রয়োজন শুধু খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ, পশু রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং মাঠ পর্যায়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা। এতে একদিকে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অন্যদিকে অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। গরুপালনের ক্ষেত্রে খামারিদের মূল লক্ষ্য থাকে কোরবানির ঈদ। এই ঈদ সামনে রেখে তারা সারা বছর গরু লালন-পালন করে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখে। একটা সময় কোরবানির জন্য আমাদের ভারতের গরুর উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হতো। কোরবানির পশুর হাটগুলো ভারতীয় গরুতে ভরে উঠত। তবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ এবং উদ্যোগে একের পর এক পশুর খামার গড়ে উঠায়, ভারতীয় গরুর উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমতে থাকে। স্বাভাবিক সময়ে এবং কোরবানির সময় দেশীয় গরুর প্রতি মানুষের আগ্রহও বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেকেই দেশীয় গরু কোরবানি দিতে চায়। দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছরে খামারিরা পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল উৎপাদন করেছে। এমনও হয়েছে, কোরবানির সময় হাটগুলোতে অতিরিক্ত পশু আমদানি হওয়ায় দাম না পেয়ে খামারিরা হতাশ হয়েছেন। অনেক সাধারণ মানুষের পক্ষেও কোরবানি দেয়া সম্ভব হয়েছে। এসবই হয়েছে, খামারিদের শ্রমে-ঘামে গড়ে তোলা খামারের কারণে। খামারিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা নিজেরাই বিনিয়োগ করে গরু-ছাগল পালনের ক্ষেত্রে অনেকটা বিপ্লব ঘটিয়েছে। এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং শত শত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। খামারিরা যখন দেশের গরুর গোশতের চাহিদা মিটাতে সক্ষমতার পথে, তখন বাধ সেধে বসেছে বৈধ ও চোরাই পথে ভারতীয় গরুর আমদানি। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দেড় মাসে শুধু বৈধ পথেই ভারতীয় গরু এসেছে লক্ষাধিক। আর প্রতিদিন ঢুকছে দুই থেকে তিন হাজার। অবৈধ পথে যে আরও কত ঢুকছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। অথচ বৈধ হোক বা অবৈধ হোক কোন পথেই দেশে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে উৎপাদিত পশুই চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এবার কোরবানি দেয়ার জন্য যে গরু-ছাগল প্রস্তুত রয়েছে, তা দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। অবিলম্বে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিকে কঠোর অবস্থান নেয়ার বিকল্প নেই। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, যেভাবে বন্যার পানির মতো ভারতীয় গরুর জোয়ার বইছে, তা প্রতিরোধে বিজিবি কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। তাদের সামনে দিয়েই অবাধে ভারতীয় গরু প্রবেশ করছে।
দেশের খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে এবং তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে অবশ্যই ভারতীয় গরু আমদানি ঠেকাতে হবে। দেশের খামারিরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ব্যাংক লোন নিয়ে খামার গড়ে তুলবে, আর ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তা ভেস্তে দেবে, তা হতে পারে না। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় অনেক গৃহস্থ এবং খামারি গরু লালন-পালনে ব্রতী হওয়ায় কোরবানিতে পশুর কোনো সংকট হবে না। এ পরিস্থিতিতে খামারি ও গৃহস্থদের উৎসাহ ধরে রাখতে ভারতীয় গরুর আমদানি বন্ধ করতে হবে। সীমান্তে বিজিবিকে সক্রিয় ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। দেশের অর্থনীতিতে পশু খামার এক নবদিগন্তের সূচনা করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও খামারিরা খামার গড়ে তুলছে। খাতটি দ্রুত বর্ধনশীল। এই বর্ধিষ্ণু খাতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সীমান্ত পথে ভারত বা মায়ানমার থেকে যাতে গরু প্রবেশ করতে না পারে, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। খামারিদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রাখতে এবং তাদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Md. Joynul Abedin ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:১৭ পিএম says : 0
No need Indian cow, we are requesting to BGB Strictly protest all Indian cow. Other wise our farmer will be damage
Total Reply(0)
আজিজুলহক ২০ আগস্ট, ২০১৭, ৯:১৪ পিএম says : 0
দেশের জনগণ কোরবান নিয়ে হ য ব র ল চাই না
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন