রাজধানীতে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে বাসাবাড়ির তালা ভেঙ্গে মালামাল চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে। গত শনিবার রমনা থানার নয়াটোলা এলাকার এক বহুতল ভবনের দুটি ফ্ল্যাটে দিনে-দুপুরে চুরির ঘটনা প্রমাণ করে চোরেরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাতে-দিনে ছিনতাই হচ্ছে হরহামেশা। অজ্ঞানপার্টি-মলমপার্টির দৌরাত্মও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের এই শোচনীয় অনিরাপত্তাজনক পরিস্থিতিতে নগরবাসীর উদ্বেগ-শংকার অবাধ নেই। আইনশৃংখলার এহেন অবনতির জন্য পুলিশের টহল ও তৎপরতা কমে যাওয়াকেই দায়ী করা হচ্ছে। ইদানিং রাজধানীতে পুলিশের টহল প্রায় দেখাই যায় না। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ফ্রি স্টাইলে সংঘটিত হলেও তা দমনে পুুলিশী তৎপরতা তেমন একটা লক্ষ্যযোগ্য নয়। এর ফলে চোর-ছিনতাইকারীসহ দুষ্কৃতীদের জন্য একটা অভয়াবস্থা তৈরি হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক একটা বাস্তবতা। এ বাস্তবতা অস্বাভাবিকও বটে। রাজধানীতে থানার সংখ্যা কম নয়। আইন-শৃংখলার উন্নয়ন ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য থানার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের সংখ্যা, যদিও বলা হয়ে থাকে, যত পুলিশ প্রয়োজন থানাগুলোতে তত পুলিশ নেই। এটা নাগরিকদের দেখার বিষয় নয়। তারা চায় সুষ্ঠু আইনশৃংখলা ও নিরাপত্তা। রাজধানীর থানাপুলিশ তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, মূল দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক কাজে পুলিশকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। এ কারণেই বস্তুত আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তার দিকটি আলগা হয়ে পড়েছে।
রাজধানীতে অপরাধমূলক ঘটনার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। যত অপরাধ ঘটে, তার সামান্য সংখ্যকের কথাই মানুষ জানতে পারে। জানতে পারে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট থেকে। পত্রপত্রিকায় সব খবর ও তথ্য আসে না। বেশীর ভাগ অপরাধের ঘটনা অপ্রকাশিত থেকে যায়। সাধারণত, থানায় মামলা বা জিডি হলেই কেবল তা সংখ্যা গণনার আওতায় আসে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ অপরাধের ঘটনা থানা পর্যন্ত পৌঁছায় না। পুলিশী হয়রানির ভয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকে থানার শরনাপন্ন হতে বিরত থাকে। তারা মনে করে, থানা মানে আরেক ঝামেলা। থানাপুলিশ মামলা বা জিডি গ্রহণ করতে চায় না। সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় আইনশৃংখলার নেতিবাচক দিকটি পুলিশ এড়িয়ে যেতে চায়। জিডি বা মামলা করতে পুলিশকে ‘সন্তুষ্ট’ করার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। পয়সা ছাড়া থানায় কিছু হয় না, এরকম ধারণা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া, থানায় মামলা বা জিডি করলেই যে দ্রæত ও সঠিকভাবে তদন্ত হবে, অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে, চুরি বা ছিনতাই হয়ে যাওয়া মালামাল ফেরৎ পাওয়া যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে মানুষ থানামুখো না হওয়াকেই শ্রেয় মনে করে। এই যে প্রতিকারহীনতা, এর বড় রকমের নেতিবাচক পড়ছে আইনশৃংখলার ক্ষেত্রে। মানুষের হতাশা বাড়ছে। সেই সঙ্গে অপরাধী-দুস্কৃতীরা লাই পেয়ে যাচ্ছে। তাদের সংখ্যা বাড়ছে, দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এখন অনেকেই আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীকে আইনশৃংখলা বাহিনী মনে করে। কেন তারা ‘রক্ষা’ কথাটি বলতে নারাজ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা আমলে নেয়া দরকার। আমলে নিলেই তারা অনুধারন করতে পারবেন, পুলিশের দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হবে।
ঈদুল আজহা আসন্ন। বরাবরই এটা আমরা দেখি, ঈদের সময় অপরাধী ও দুস্কৃতীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি বেড়ে যায়। এর আলামত ইতো মধ্যেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ী যাবে। রাজধানী খালি হয়ে যাবে। এখানে তাদের বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে তারা পর পর নেই শংকিত। যেভাবে চোরের দল তৎপর হয়ে উঠেছে তাতে তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে চুরিদারি বেড়ে যাবে, এটা সহজেই অনুমান করা যায়। ওদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, জালটাকার কারবারি এবং টানাপার্টি-মলমপার্টি-অজ্ঞানপার্টির লোকেরা যেভাবে মাঠে নেমে পড়েছে তাতে বড় রকমের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। এধরনের কোনো পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় কিংবা আইনশৃংখলার সুষ্ঠুতা ও জননিরাপত্তা বিঘœত না হয় সে জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় হতে পারে। এর কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো মূল্যে আইনশৃংখলা সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন