বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ প্রত্যাহার

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম দুর্নীতিসহ নানা জটিলতায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের সহযোগিতা প্রত্যাহার করছে। একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগিরা। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকের প্রায় চারমাস কেটে গেলেও বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি আজও। টানা চার বছর ধরে বাজেট সহায়তায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না বিশ্বব্যাংক। একের পর এক প্রকল্প সহায়তার চুক্তি বাতিল করে অর্থ ফিরিয়ে নিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগিরা। শুধু তাই নয়, পাইপলাইনে জমা থাকা বিপুল বৈদেশিক সহায়তা অর্থ সরকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এদিকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে সরকারের আর্থিক খাতের দুর্নীতি কমিয়ে আনতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগতমান নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে ওই প্রকল্প থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর বাইরে গত কয়েক বছরে গুরুত্বপূর্ণ আরো ১০ প্রকল্প থেকে অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি না থাকায় এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রকল্প থেকে ৬৪০ কোটি, ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্প থেকে ৫৮৪ কোটি টাকা প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আলোচ্য দৈনিককে জানিয়েছেন, প্রতিবছরই অর্থ প্রত্যাহারের মতো কিছু ঘটনা ঘটে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ উন্নয়ন সহযোগিরা দিতে পারে না। তিনি মনে করেন সবসময় চেষ্টা করা হয় প্রতিশ্রুত অর্থ সময় মতো ছাড় করে প্রকল্পের কাজে লাগানো।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে ইতোমধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে। অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ জনবলের অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট সংক্রান্ত কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গও বিবেচনার দাবি রাখে। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, প্রতিবছরই কোন না কোন প্রকল্পের অর্থ ফেরত যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমনটা হচ্ছে? সাধারণভাবে মনে করা হয় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে জন্য যে পরিমাণ দেশীয় মুদ্রার প্রয়োজন হয় তা না থাকলে বৈদেশি মুদ্রা ব্যবহার করা যায় না। প্রকাশিত খবরেও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে যে, আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের মাঝামাঝি দুর্নীতির অভিযোগে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অদক্ষতার অভিযোগ তো আছেই। এর বাইরেও ভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায়, আর্থিক বছরের শেষ কয়েক মাসে অর্থ ছাড়ের হিড়িক পড়ে। তাড়াহুড়ো করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এতে একদিকে যেমন কাজের মান নিম্নমুখী হয়, তেমনি দুর্নীতি লাগাম ছাড়া হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই এসব অনিয়ম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর দৃষ্টিগোচর হয়। এতে বাধ্য হয়েই তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ ফিরিয়ে নিতে হয়। কারণ যাই হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত যায়, তাতে মূল ক্ষতি দেশের। এ অবস্থা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
উন্নয়ন হচ্ছে একটি সমন্বিত বিষয়। কোন বিশেষ প্রকল্পের উন্নয়ন একমাত্র উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সার্বিক উন্নয়নের কথা ভাবতে হলে সবধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। সামগ্রীকভাবে এ কথাই সত্যি টাকা কাজে লাগাতে পারলে তা দেশেই থাকে। দেশের মানুষের কাজে লাগে। উন্নয়ন রোডম্যাপ থেকে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার অর্থ হচ্ছে উন্নয়নের পশ্চাদমুখী হওয়া। কাদের দুর্নীতি অদক্ষতা, অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে অবশ্যই তা খুঁজে দেখা দরকার। অনিয়ম বা অন্য কোন কারণ থাকলে তা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখা অপরিহার্য। যদি এসব ক্ষেত্রে আস্থার কোন সংকটের প্রসঙ্গ থেকে থাকে তাও দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ কাজে লাগাতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এব্যাপারে সকলে আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন