এটিএম রফিক, খুলনা থেকে : খুলনাঞ্চলের মসজিদগুলোতে জুমার খুতবা ও আলোচনায় জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য রাখা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে নজর রাখছে গোয়েন্দা সংস্থা। চলছে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ। ইতোমধ্যে খুলনা মহানগরীর ৫১০টি মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন এবং মসজিদের মক্তবের আরবি শিক্ষকের নামের তালিকা তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে জঙ্গিবাদ রোধ ও উগ্রপন্থা দমন করতে এই তালিকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল ব্রাঞ্চের রাজনৈতিক শাখা মসজিদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য অধীনস্থ শাখাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় মসজিদের নাম ও ঠিকানা, ওই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং মসজিদে মক্তব থাকলে আরবী শিক্ষকের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, মসজিদ কমিটির নামের তালিকা ও মোবাইল নম্বর পাঠাতে বলা হয়।
পুলিশের সূত্রটি জানায়, নির্দেশের পরই খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন থানা পুলিশ তাদের এলাকার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে জানা যায়।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের মহাসচিব মাওলানা গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে মুয়াজ্জিনের কাছ থেকে একজন পুলিশ তথ্য নিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন মসজিদ থেকে ইমামরা ফোন করে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে, ভয় বা আতঙ্কের কিছু নেই।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বিশেষ শাখা থেকে জানা যায়, গত এক মাসে মহানগরীর ৫১০টি মসজিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা সদর থানায় ১৩৫টি, সোনাডাঙ্গা থানার ১১২টি, লবণচরা থানার ৩৯টি, হরিণটানা থানার ১২টি, খালিশপুর থানার ৭৪টি, দৌলতপুর থানার ৭৮টি, আড়ংঘাটা থানার ৩৬টি এবং খানজাহান আলী থানা এলাকার ২৪টি মসজিদ রয়েছে।
ইমামরা জানান, হঠাৎ করে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মসজিদে গিয়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের বিয়ষটি কেউ ভালোভাবে নেয়নি। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন জনকে ফোন করেছেন। আবার জঙ্গিবাদ রুখতে হলে বা এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হলে কেনই বা ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের তথ্য লাগবে সেটাও তারা বুঝতে পারছেন না।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও খুলনা টাউন জামে মসজিদের ইমাম অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে মসজিদের ইমামরা ফোন করে মসজিদে পুলিশের উপস্থিতি এবং তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছেন।
খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সিএ হালিম জানান, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের তালিকা তৈরি প্রায় চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে। এছাড়া জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেয়ার বিষয়টিও মনিটরিং করা হচ্ছে। বিগত সপ্তাহে খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৫৬টি মসজিদ মনিটরিং করা হয়। প্রত্যেকটি মসজিদেই জঙ্গিবাদের বিপক্ষে ইমামরা বক্তব্য রেখেছেন। খুলনার পরিস্থিতি অনেক ইতিবাচক।
কেএমপি’র মুখপাত্র এডিসি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, মসজিদ ও মক্তবের তালিকা হালনাগাদ ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। কোন ধরনের জঙ্গিবাদের উত্থান যাতে না ঘটে সেজন্য প্রতিটি মসজিদ ও মাদরাসায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন