রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ ইস্যুতে আলোচনায় বিএনপির সদিচ্ছার কোনও প্রমাণ পাচ্ছি না।
দলটি এটিকে জাতীয় সমস্যা ভাবছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেন তিনি বলেন, দেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতে বিএনপির আন্তরিকতার প্রমাণ পাচ্ছি না। গতকাল শনিবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বেইজিং যাচ্ছে। ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর ঐক্যের ডাক দিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই কথা বলেন। স¤প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিকে বিভক্ত করছে।
তার এ মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির ভেতর বিভক্তির সৃষ্টি বিএনপিই করছে। ২০ দিন পর তারা কক্সবাজারে গেছেন। তাও যাওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারের কোন পর্যায়ে তারা যোগাযোগ করেননি। শুধু মিডিয়াকে জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমরা সবার সহযোগিতা চাই। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বিএনপি জাতীয় স্বার্থে বিবেচনা করলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আসতেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের অবাক লাগে, লন্ডন বসে খালেদা জিয়া কথা বলছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন, আর এই সময়ে বারবার দেশে ফেরার তারিখ পাল্টাচ্ছেন। কেন? তিনি দেশে থাকলে এখন কনট্রিবিউট করতে পারতেন। দেশের বাস্তবতা কি বিদেশে থেকে বোঝা যায়? তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘসহ সারা দুনিয়া একবাক্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করে যাচ্ছে। শুধু একটি দল সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেই যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে বসে কয়েকটি দেশের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন রোহিঙ্গা নিয়ে। তিনি লন্ডনে বসে কথা বলছেন কিন্তু দেশে আসার তারিখ বারবার পরিবর্তন করছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান যদি জাতীয় সমস্যা বিবেচনা করেন, দেশে থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবেন না? তিনি বিদেশে বসে কথা বলছেন, যেখানে দেশের বাস্তবতা তিনি বুঝতে পারছেন না। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দুনিয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা দেখে তাদের (বিএনপি) গাত্রদাহ হচ্ছে। সারা দুনিয়া বলে এক কথা, আর বিএনপি বলে আরেক কথা।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে কাউকে বাধা দেয়া হচ্ছে না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ত্রাণ প্রদানে নিয়ম মেনে গেলে কোনো বাধা দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের চিন সফরের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সভাপতিমন্ডীর সদস্য ফারুক খান। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনকে পাশে পেতে কোনও আলোচনা হবে কিনা। জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আলোচনা হবে। মিয়ানমারের পক্ষে রাশিয়ার বিবৃতি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার বিবৃতি নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সবার যেন আস্থা থাকে এজন্য ত্রাণ ও অন্যান্য কাজে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকেও প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফর যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকেছেন। তিনি সবাইকে নিয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেছেন।
এর আগে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শাম্মী আহমেদ, আফজাল হোসেন, অসীম কুমার উকিল, দেলোয়ার হোসেন, শ ম রেজাউল করিম, শামসুন্নাহার চাঁপা, বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার, নজিবুল্লাহ হিরু, রিয়াজুল কবির কাওছার, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন