অবশেষে মৌচাক-মালিবাগ সমন্বিত উড়াল সড়কের মূল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ধোয়ামোছা, রং, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোর কাজ। অনেক প্রতীক্ষার এই উড়াল সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে আগামী ।
চার লেনের এই উড়াল সড়ক ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়াল সড়ক প্রকল্প।
উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় এই এলাকার মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তবে নিচের সড়ক সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
জানতে চাইলে উড়াল সড়কটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল জানান, জুন মাসে উড়াল সড়কের মূল কাজ (মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার) শেষ হয়েছে। এখন ধোয়ামোছার কাজ চলছে, সেটাও শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এটা উদ্বোধন করা হবে। ১৫ অক্টোবর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওই উড়াল সড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়ালসড়কের এক দিক খুলে দেওয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন।
এখন খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় আছে উড়াল সড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উড়াল সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)।
প্রকল্পের অন্যতম ঠিকাদার তমা কনস্ট্রাকশনের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ উড়াল সড়কটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সড়ক (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)।
আজ রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, উড়াল সড়কের সর্বশেষ অংশের কাজ শেষ। চলছে ধোয়ামোছা, রং ও বিদ্যুতের খুঁটি এবং বাতি লাগানোর কাজ। এর মধ্যে শান্তিনগর-মালিবাগ অংশে উড়াল সড়কের দুই পাশে দেয়ালে সাদা রং এবং লোহার পাইপে লাল রং করা শেষ হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।
শান্তিনগরে উড়াল সড়কের শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক। মো. সুমন নামের এক শ্রমিক বলেন, উড়াল সড়কের সব কটি খুঁটির সংযোগ কাজ শেষ হয়েছে। দু–এক দিনের মধ্যে শান্তিনগর অংশের কাজ শেষ হবে।
তবে উড়াল সড়কের নিচের মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় সড়কটির সংস্কারকাজ শেষ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।
মৌচাক মার্কেটের সামনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে আমাদের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই কষ্টের কথা কখনো ভোলার নয়। তবে উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা খুশি। তা উদ্বোধনের আগেই নিচের সড়কগুলোর সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে হবে।’
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, উড়ালসড়কের নিচের সড়ক ও ফুটপাতের সংস্কারকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। উড়াল সড়ক উদ্বোধনের আগেই নিচের সড়কের সংস্কারকাজ শেষ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন