‘আমরা ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতেছিলাম। আমার চোখের সামনে বিএসএফ তাকে (ফেলানী) গুলি করে মারছে। সে কাঁটাতারে অনেকক্ষণ ঝুলে ছিল। মেয়ে অনেকক্ষণ পানি পানি করছে আমার সামনে। মেয়েকে আমি বাঁচাইতে পারি নাই। অনেক চেষ্টা করছি।’
আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই স্মৃতিচারণা করছিলেন ফেলানী খাতুনের বাবা নুরুল ইসলাম। ফেলানী হত্যার বিচার ও সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন।
মানববন্ধনে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেখতে দেখতে সাত বছর হয়ে গেল, আমি এখনো বিচার পাই নাই। আমি কিছুই চাই না, শুধু আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার চাই। শুনলাম, কাল (সোমবার) ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারের শুনানি আছে। ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি, এই বিচার যেন গুরুত্ব পায়।’
ফেলানীর বাবা আরও বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি বাংলাদেশে ভাত পাই না, এ জন্য ভারতে গেছিলাম। উনারা বলেন, আমি অবৈধ পথে গেছি। অবৈধ পথে কেন যায়, যখন পেটে ভাত থাকে না তখন। পেটের দায়ে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গেছি।’
ফেলানী খাতুন ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি তার বাবার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশ আসছিলেন। একটি বাঁশের মইয়ের সাহায্যে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া টপকে ফেলানীর বাবা পেরিয়ে যান। ফেলানী পার হওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। ফেলানীর লাশ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঝুলেছিল কাঁটাতারের বেড়াতে।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, বিএসএফে ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষ তাঁর মেয়ে ফেলানীকে গুলি করে মারে। পরে বিএসএফের নিজস্ব আদালতে এর বিচার হয়। অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকারও করেছিলেন। তবে বিএসএফের আদালত অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে পরে নির্দোষ ঘোষণা করেন।
ফেলানী খাতুন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক পরিষদ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস ঘোষণা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত ও ঢাকার গুলশান-১ থেকে তেজগাঁও সড়কের নাম ফেলানী সরণি করা, হত্যাকারী অমিয় ঘোষের ফাঁসি এবং ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন