শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

পুষ্টি সমস্যা সমাধানে ফল ও সবজি

| প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা যা খাই এবং পান করি তাকেই আমরা খাদ্য বলে থাকি। আর পুষ্টি বলতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং কাজ করার শক্তি পাবার জন্য যে সমস্ত খাদ্যসমূহ আমরা খেয়ে থাকি তাকে বোঝায়। সাধারনত : আমরা পুষ্টির অভাব বা সমস্যাকেই অপুষ্টি বলে থাকি। পুষ্টি উপাদানের অভাব ক্রমাগত কিছুদিন থাকলেই দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়, মেজাজ খিটমিটে হয় এবং শুকিয়ে যায়। কোন ব্যক্তির শরীরে ক্রমাগত কিছুদিন যাবত খাদ্যের এক বা একাধিক উপাদানের অভাব ঘটলে বলা হয় ঐ ব্যক্তি অপুষ্টিতে ভুগছে। অপুষ্টি সহজে বোঝা যায় না। অপুষ্টির প্রধান স্বীকার হচ্ছে মা ও শিশুরা। ছোট শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের অপুষ্টি হলে প্রথমেই তাদের বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয়। তারপর পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিজনিত উপসর্গ দেখা দেয়। গর্ভবতী মহিলার পুষ্টির অভাব হলে গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না, গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দেয় এবং কম ওজনের শিশু প্রসব করে। যে সব মায়েরা তাদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা যদি অপুষ্টির শিকার হন তাহলে দুগ্ধজাত শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, ওজন বাড়ে না, বুদ্ধির বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয়। আমাদের দেশে অপুষ্টি সমস্যা এক ভয়াবহ আকারে বিরাজ করছে। প্রতি ১০০ জন শিশু যাদের বয়স ৫ বৎসরের নীচে তাদের ৯০ জনই অপুষ্টির শিকার । আর বাকী ১০ জনের মধ্যে ৯ জন অপুষ্টির শিকার হলে তাদের দেখে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। আমাদের শরীরে যে পুষ্টি উপাদানগুলো খুব সামান্য পরিমানে প্রয়োজন, কিন্তু এর অভাবে মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলোকেই আমরা অনুপুষ্টি বলে থাকি। যেমন ঃ লৌহ, ভিটামিন-এ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি এসব। আসুন আমরা জেনে নেই এসব অনুপুষ্টির অভাব হলে আমাদের শরীরে কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে এবং এর সমাধান আমরা কিভাবে করতে পারি।
ভিটামিন-এ’র অভাবে আমাদের শরীরে যে সকল সমস্যা হতে পারে সেগুলো হল : ১. রাতকানা-যার ঠিকভাবে ঠিকসময়ে চিকিৎসা না করলে পুরোপুরি অন্ধ এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। ২. হজমে সমস্যা হয়। ৩. আমরা ঘন ঘন অসুস্থ হই এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ৪. আমাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয়। ৫. ভিটামিন-এ’র অভাব সবচেয়ে বেশী দেখা যায় শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ৫ বছরের নীচে এবং যে সব মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়ান তাদের মধ্যে। তবে এসব কথা শুনে ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ আমাদের দেশে অনেক সবজি ও ফল আছে যা থেকে আমরা সহজেই আমাদের শরীরে ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরন করতে পারি। এসব সবজি ও ফল হচ্ছে-মিষ্টি কুমড়া, গাজর, পালং , পুঁই শাক, লালশাক, ধনেপাতা, বাধাকপি, টমেটো, কাচামরিচ, পাকা পেঁপে, আম, কাঁঠাল, কলা এবং আনারস। এগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। এতক্ষণ আমরা ভিটামিন ‘এ’ সম্পর্কে জানলাম।
এবার আমি লৌহের অভাব ও কোন ফল ও সবজিতে এটা পাওয়া যায় সে সম্বন্ধে বলছি। ১. লৌহের অভাবে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। ২. প্রাথমিক অবস্থায় এর কোন উপসর্গ নেই। ৩. শরীরে লৌহের অভাব বেশী হলে তা শারীরিক দুর্বলতা, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন অসুস্থতা দেখা দেয়। ৪. শরীরে রক্ত স্বল্পতার কারনে শিশুদের মস্তিস্কের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়, শিশুরা তাদের স্কুলের পড়া সহজে শিখতে পারে না, মনে রাখতে পারে না এবং সহপাঠীদের থেকে পিছিয়ে পড়ে। পুঁইশাক, লালশাক, কচুশাক, ধনেপাতা, ডাটাশাক, সজনেশাক, সজনেডাটা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচাকলা, ডুমুর, গাজর, পেয়ারা, আমড়া, খেজুর এসব শাকসবজি ও ফলে প্রচুর পরিমানে লৌহ আছে। আমরা এসব শাকসবজি ও ফল যদি নিয়মিত খাই তাহলে সহজেই আমাদের শরীরের লৌহের চাহিদা পূরন করতে পারবো।
আয়োডিনের অভাবে যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-বামনত্ব বুদ্ধিহীনতা, হাবা-গোবা, অধিক শিশু মৃত্যু, শিশুর শেখার ক্ষমতা কমে যায়, বয়স্কদের কর্মক্ষমতা কমে যায়, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। আয়োডিনের অভাব দূর করতে হলে আমাদেরকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। আয়োডিনের অভাব দূরীকরণে শাকসবজি বা ফলের বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই। তবে অবশ্যই শাকসবজি রান্নার সময় আয়োডিন যুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে হাড়ের গঠন ঠিকমত হয় না। যার ফলে হাড় সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে। অনেক সময় ক্যালসিয়ামের অভাবে পঙ্গুত্বও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের দাঁতের সমস্যা হতে পারে। আমাদের দেশের উৎপাদিত ফল ও সবজির ভেতর প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম আছে। পালংশাক, পুঁইশাক, সজনে শাক, সজনে ডাটা, ঢেড়স, লালশাক, বাধাঁকপি, ধনেপাতা, সীম, কামরাঙ্গা, বেল, ডালিম, জামরুল, খেজুর এসব শাকসবজি ও ফলে প্রচুর পরিমানে ক্যালশিয়াম পাওয়া যায়। যা খেলে আমরা সহজেই আমাদের শরীরের চাহিদা পূরণ করতে পারব। এতক্ষণ ফল ও সবজিতে যে সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় এবং এগুলোর অভাবে আমাদের শরীরে যে সকল রোগ বা সমস্যা দেখা দেয় সে সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে আমরা সহজেই আমাদের পরিবারের সদস্যদের পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা করতে পারি। এর ফলে আমরা সকলেই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারব। তাই আসুন আমরা আমাদের ঘরের আঙ্গিনায় বসত বাড়ির পাশে, পতিত জমিতে রকমারী মৌসুমী ফল এবং শাক-সবজি চাষ করে আমাদের পুষ্টিহীনতা সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হই।

ষ ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট- ০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন