শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা বেলস পালসি

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তুলি এবার বিএসসি পরীক্ষা দিবে হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে যেয়ে দেখে তার মুখ একদিকে বাকা হয়ে গেছে, ডান চোখ বন্ধ হয় না, কুলি করতে গেলে অন্য পাশে চলে যায়, ওতো ভয়ে চিৎকার করে কান্না-কাটি শুরু, চিৎকার শুনে তুলির মা দৌড়িয়ে এলো, মেয়েকে দেখে মা ও চিন্তায় পড়ে গেল, তুলির বাবা অফিসে চলে গেছে, মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলেন।
সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন ডাক্তার সাহেব রোগের বর্ণনা শুনে আশস্ত করলেন, বললেন এটাকে ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি বলে, এই রোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই তবে শুধুমাত্র ঔষধে এটা ভাল নাও হতে পারে, ঔষধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। কিছু ব্যায়াম ও নিয়ম কানুন মেনে চললে ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে ।
আসুন এখন আমরা তুলি যে রোগে আক্রান্ত হল তার কারন ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিই –
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কি?
এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস, আমাদের ৭ তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। এটি যখন আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন তাকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা পালসি বলে । জন বেল নামের এক ভদ্রলোক এই রোগটি প্রথম আবিস্কার করেন সেজন্য একে বেলস পালসিও বলে ।
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কাদের বেশী হয়?
এটি যেকোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগটি বেশী দেখা যায় ।
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কেন হয় ?
বেলস পালসি বিভিন্ন কারনে হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
১। ভাইরাল ইনফেকশন
২। মধ্য কর্নে ইনফেকশন
৩। ঠান্ডা জনিত কারনে
৪। আঘাত জনিত কারন
৫। মস্তিস্কের স্ট্রোক জনিত কারন
৬। কানের অপারেশন পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি হলে রোগীর কি কি লক্ষণ দেখা যায় ?
১। আক্রান্ত রোগীর মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যায়।
২। আক্রান্ত পাশের চোখ বন্ধ হয় না ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে ।
৩। কুলি করতে গেলে অন্য পাশে চলে যায় ।
৪। খাবার গিলতে কষ্ট হয় ।
৫। কপাল ভাজ করতে পারে না ।
৬। অনেক সময় কথা বলতে কষ্ট হয় ।
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি নির্ণয় করবেন কিভাবে ?
এটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে ও রোগীর ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করতে পারেন, তবে অনেক সময় কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন
১। কমপ্লিট বøাড কাউন্ট।
২। এক্স-রে অফ টি এম (টেম্পরো-মেন্ডিবুলার) জয়েন্ট
৩। নার্ভ কন্ডাকশন ভেলসিটি (এন সি ভি) অফ ফেসিয়াল নার্ভ ইত্যাদি
ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি’র চিকিৎসা কি?
এই রোগের চিকিৎসা কারনের উপর নির্ভর করে । ঔষধ কারন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন, তবে সবক্ষেত্রেই ঔষধের পাশাপাশি মুল চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
এই রোগে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্লান করে থাকে তার মধ্যে
- প্রোপ্রাইওসেপ্টিভ নিউরো মাস্কুলার ফ্যাসিলিটেশন
- ইনফ্রা রেড রেডিয়েশন থেরাপি
- ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি
- এক্টিভ ও প্যাসিভ ফ্যাসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ
- স্পীচ রি-এডুকেশন থেরাপি
- ব্যালুনিং এক্সারসাইজ
- রিঙ্কলিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি
তবে এই রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রæত সুস্থ হওা যায় ।
রোগীর কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ?
চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে।
যেমন
১। ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে
২। আইস্ক্রিম ও ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবে না
৩। বাহিরে বা রোদ্রে গেলে চোখে সানগøাস ব্যাবহার করতে হবে যেন আক্রান্ত চোখে ধুলাবালি বা বেশী আলো ঢুকতে না পারে ।
৪। রাতে ঘুমানোর সময় আক্রান্ত চোখের উপর রুমাল বা নরম কাপড় দিয়ে রাখতে হবে যাতে কোন কিছু চোখের মধ্যে না পড়ে ।
৫। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে ।

ডা: এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যাথা, পারালাইসিস
ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোবা : ০১৭১৭ ০৮ ৪২ ০২

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
ফারুক হোসেন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:০৪ পিএম says : 0
আমার হয়াছিল আমি ঠিক হয়া গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
Total Reply(0)
md jahirulIslam ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:২১ পিএম says : 0
থেরাপি কত দিনপর পর নিতেহবে
Total Reply(0)
রবিন ২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০১ এএম says : 0
যদি ইনপেকশনের জন্য হয় তাহলে কি করতে হবে,,, প্লিজ আন্স
Total Reply(0)
রবিন ২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০১ এএম says : 0
যদি ইনপেকশনের জন্য হয় তাহলে কি করতে হবে,,, প্লিজ আন্স
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন