বাংলার জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলিমের কণ্ঠে গাওয়া ”এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা ”। এক সময় মেঘনা ছিল ভয়াল রাক্ষুসী, আর এখন সেই মেঘনা নদী হাতিয়াবাসীর জন্য আর্শিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমনিভাবে নোয়াখালীর দক্ষিনাঞ্চলীয় বিশাল মেঘনার বুক চিরে প্রতিনিয়ত যে হারে ভূমি জাগছে তাতে করে আগামী দশকে দেশের মানচিত্রে বিশাল ভূখন্ড যুক্ত হবার প্রহর গুনছে। ১৯৭৪ সাল থেকে হাতিয়া পুরাতন শহরসহ মূল ভূখন্ডের চারটি ইউনিয়ন মেঘনার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হলেও বর্তমানে কয়েকটি উপজেলা আয়তনের সমান ভূমি জেগে উঠছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়াদ্বীপের চর্তূদিকে ছোটবড় মিলিয়ে ৬০টি চরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৭টিতে জনবসতি ও ৫টিতে চাষাবাদ চলছে। আগামী ৪/৫ বছরে অন্তত আরো ১০টি চরে চাষাবাদের আশাপোষন করছে স্থানীয় অধিবাসীরা । এছাড়া অবশিষ্ট প্রায় ৪০টি ডুবোচর আগামী এক দশকে পরিপূর্ণতা লাভ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে হাতিয়াবাসী ।
হাতিয়া মূল ভূখন্ডের পূর্বদিকে ২৫ কিলোমিটার মেঘনা পেরিয়ে ভাষানচর। এখানে রোহিঙ্গা শরনার্থী পূর্ণবাসনের প্রক্রিয়া চলছে। ভাষান চরের দক্ষিন পাশে রয়েছে গাঙ্গুরিয়ার চর। ভাষানচরের পশ্চিমে ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চর নূর ইসলামে বিগত আড়াই দশক যাবত চাষাবাদ ও গরু মহিশের বিচরণ ক্ষেত্রে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । হাতিয়া চরঈশ্বর ইউনিয়নের পূর্বে কাজীর বাজার এবং বুড়িরচর ই্উনিয়নের রহমত বাজারের পূর্ব দিকে প্রায় ৩টি ইউনিয়নের সমান ভূমি জেগে উঠেছে। এসব ভূমিতে বসতি, চাষাবাদ ও বনায়ন চলছে । বুড়ির চরের দক্ষিন-পূর্ব দিকে কালির চরসহ আরো একটি বিশাল ভূমি জেগেছে দুই দশক পূর্বে । চরটিতে কয়েক হাজার অধিবাসীর বসবাস ছাড়াও চাষাবাদ এবং শুটকী উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত এলাকাটি। হাতিয়া দ্বীপের দক্ষিণাংশে বিশাল আয়তনের জাহাজমারা ইউনিয়ন । এর দক্ষিন ও পূর্ব দিকে বেড়ীবাঁধের বাইরে অন্তত ২টি ইউনিয়ন আয়তনের সমান ভূমি জেগেছে । উক্ত এলাকায় কয়েক হাজার বসতি ও চাষাবাদ চলছে। হাতিয়া মূল ভূখন্ডের পশ্চিম দক্ষিনে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত নিঝুম দ্বীপ। দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে এটি বিশেষভাবে পরিচিত। নিঝুমদ্বীপের পশ্চিমে বেশ কয়েকটি ডুবো চরের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিঝুমদ্বীপের দক্ষিন পূর্বে ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দমার চরে দশ সহ¯্রাধিক অধিবাসীর বসবাস। দমার চরের দক্ষিনে সাগরের তলদেশে তেল ও গ্যাস মজুত রয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে । অপরদিকে দমার চরের পূর্ব ও দক্ষিনে বিশাল মেঘনার প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটারে পানির গভীরতা ৬/৭ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র থেকে জোয়ারের সাথে কোটি কোটি টন পলিমাটি এখানকার নদী ভরাট করছে । বঙ্গোপসাগরে মৎস আহরনকারী জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, শুস্ক মৌসুমে জাহাজমারা ঘাট থেকে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের শতাধিক কিলোমিটার দূরত্বে পানির গভীরতা কোথাও ৮/৯ মিটার আবার কোথাও ৫/৬ মিটারে এসে পৌছেছে । ফলে আগামী এক দশকে জাহাজমারার দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে একটি জেলা আয়তনের সমান ভূমি জেগে উঠবে।
হাতিয়া তমরদ্দি ঘাটের পশ্চিম উত্তরে ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঘাসিয়ার চর রয়েছে। স্থানীয় বন বিভাগ এখানে বনায়নে তৎপর রয়েছে । তমরদ্দি ঘাট থেকে ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার নদীপথে দূরত্ব ৮/৯ কিলোমিটার। গত এক দশকে উক্ত নৌ-চ্যানেলে চর জেগে উঠায় শুস্ক মৌসুমে সতর্কতার সাথে নৌ-যান চলাচল করছে। হাতিয়া উপজেলা মূল ভূখন্ডের উত্তরাঞ্চলে একটি উপজেলা আয়তনের সমান ভূমি জেগে উঠেছে। এখানে হরনী ও চাঁনন্দী ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। এদু’টি ইউনিয়নে ৭০ হাজার অধিবাসী বসবাস করছে। অপরদিকে চাঁনন্দী ইউনিয়নের পূর্ব দিকে আরো একটি উপজেলা আয়তনের সমান ”স্বর্ণদ্বীপ’ সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। হাতিয়া নলচিরা স্টীমার ঘাট থেকে উত্তরে হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাটের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে অন্তত ২৪ কিলোমিটার নৌপথে অসংখ্য ডুবো চর জেগে উঠছে। এক কথায় হাতিয়া দ্বীপ উপজেলার চর্তূদিকে মেঘনায় যে হারে ভূমি জাগছে - তাতে করে আগামী এক থেকে দেড় দশকে কমপক্ষে ২টি জেলার আয়তনের সমান ভূমি জাগছে । হাতিয়া মূল ভূখন্ডের পশ্চিমে ঢালচর নোয়াখালী অংশ থেকে পূর্বে ভাষান চরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার অপরদিকে হরনী ইউনিয়ন হাতিয়া অংশ থেকে জাহাজমারা দক্ষিন প্রান্তের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। অর্থাৎ হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন ৫১১০ কিলোমিটার। যাহা দুইটি জেলার আয়তনের সমান। তেমনিভাবে আগামী এক থেকে দেড় দশকে হাতিয়ার দক্ষিন ও পূর্ব দিকে আরো বিশাল ভূমি জেগে উঠার উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে করে দেশের মানচিত্রে বিশাল ভূমি যুক্ত হবার অপেক্ষায় রয়েছে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন