শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ

| প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বাংলাদেশেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। বিজেপি মহাসচিব দু’দিনের ঢাকা সফরকালে গত সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রাত:রাশকালে এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের বিগত জাতীয় নির্বাচন বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলেও ভারতের ক্ষমতাসীনরা একতরফাভাবেই সেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছিল। সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হিসেবে ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার পরও আওয়ামীলীগের তরফ থেকে আলোচনার মাধ্যমে যথাশীঘ্র একটি নতুন নির্বাচনের কথা বলা হলেও গত চার বছরেও তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এহেন বাস্তবতায় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই নব গঠিত নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সাথে আলোচনায় বসলেও ক্ষমতাসীনরা এখনো প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সাথে সমঝোতা বা সহাবস্থানের রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে এখনো সরকারের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় ওয়ারেন্ট, গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে তখন বিরোধী দল ও জোটের নেতাদের ধরপাকড়, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পুলিশি হয়রানি শুভ লক্ষণ বহন করেনা।
রাম মাধব যখন ঢাকায় একটি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন, তখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের একটি নাশকতার মামলায় কুমিল্লার দায়রা জজ আদালত বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে। অন্যদিকে সোমবার রাতে বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরিকদল জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীর মকবুল আহমেদ, নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পারওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ৯জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিরোধি জোটের অন্যান্য দলের নেতাদেরও পুলিশ হয়রানি বা গ্রেফতারের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা যায়। যাদের সাথে সমঝোতা করে বা যাদেরকে আস্থায় রেখে সরকার আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা সে সব রাজনৈতিকদলের শীর্ষ নেতাদের ধরপাকড় ও গ্রেফতারের ঘটনা দেশবাসির কাছে ভিন্ন মেসেজ দিচ্ছে। এ ধরনের বাস্তবতায় আগামীতে একটি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীতে সরকারের সদিচ্ছা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ ও সমঝোতার জন্য সরকারের হাতে এখনো বেশ কয়েকমাস সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও সাংবিধানিক রূপরেখা মেনে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করা অসম্ভব নয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছিল মূলত: সরকার ও বিরোধী জোটের অনমনীয় ও একরোখা মনোভাবের কারণে। সে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের মনোভাব এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। শুরু থেকেই তারা একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য বিভিন্ন সময়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। এহেন বাস্তবতায় আগামী বছরে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকেই সকলের দৃষ্টি। এমনকি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিও আগামীতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বিজেপে সেক্রেটারী রাম মাধবের বক্তব্যটি এ কারণেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিগত সময়ের মত আগামী নির্বাচনে বিজেপি’র ভারত সরকার কোন একপাক্ষিক নির্বাচনে নির্লজ্জ সমর্থন দেবেনা, এটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামি মানুষের প্রত্যাশা। দেশে ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সংস্কার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পর্যায়ক্রমিক আলোচনা শুরু করেছে। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গ্যারান্টি মূলত সরকার এবং বিরোধি রাজনৈতিক পক্ষের সমঝোতা ও সহাবস্থানের উপর নির্ভর করে। নির্বাচন কমিশনের সাথে চলমান আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন বিশেষ সরকার, অন্তবর্তিকালীন সরকার, মেজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ নানা সুপারিশ দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহন এবং সকলের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে জনসমর্থনপুষ্ট দাবীগুলোর বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের ভ‚মিকার উপরই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং গ্রহণযোগ্যতার মানদন্ড। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এবং ক’দিন আগে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি অভিন্ন সুরে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বসম্প্রদায়ের মত তারাও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এটা এ দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন