শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আরাকান আর্মির অধিকাংশ সদস্য নৃতাত্ত্বিক বৌদ্ধ

ফের অশান্ত রাখাইন, সেনাবাহিনী-আরাকান আর্মি সংঘর্ষে রোহিঙ্গাসহ নিহত তিন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দিন দিন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। রাজ্যটি স্বাধীন করতে ভয়ানক হয়ে উঠছে ‘আরাকান আর্মি’। এদিকে মিয়ানমার সরকার এ ‘আরাকান আর্মি’ সংগঠনটিকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দেশটি এ গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করেত মরিয়া হয়ে উঠেছে। ১৮ শতকে বার্মিজদের হামলার আগে ঐতিহাসিকভাবে আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। ইতিমধ্যে রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অভিযান চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। ফলে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে রাখাইন। আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। গত ৪ জানুয়ারি আরাকান আর্মি’র হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহতের পর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা ঘাঁটি ও বাঙ্কার বসিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে সেনা সংখ্যাও। এসব অভিযোগ করেছেন আরাকান আর্মির নেতা মেজর জেনারেল টান মিয়াত নেইং। আরাকান আর্মির প্রধান টিওয়ান এমরাট নেয়াং স্থানীয় গণমাধ্যম ইরাবতীকে বলেন, রাখাইন রাজ্যের অবশ্যই নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকতে হবে। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী থাকার অর্থ হচ্ছে- রাখাইনের নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব টিকে থাকবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কাচিন বিদ্রোহীদের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জন্য সম্ভাব্য বড় ধরনের সামরিক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেটি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির চেয়ে অনেক শক্তিশালী হবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্তনি ডেভিস বলেন, আরাকান আর্মির যোদ্ধারা সুসজ্জিত ও পশিক্ষণপ্রাপ্ত। আগামীতে বড় ধরনের লড়াইয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে সাম্প্রতিক এসব সহিংসতা। এর আগে চলতি মাসে আরাকান আর্মির হামলায় ১৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আরকান আর্মির নেতা টান মিয়াত নেইংয়ের বরাত দিয়ে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী’র খবরে বলা হয়েছে, সরকারি সেনারা আকাশ ও সড়ক পথে রাখাইনে আসছে। উত্তর রাখাইনে সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহারে গ্রেফতার করছে এবং গ্রামগুলোতে মর্টার ছুঁড়ছে। একইসঙ্গে সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। মূলত আরাকান আর্মির অধিকাংশ সদস্য এসেছেন নৃতাত্তি¡ক বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলো থেকে। অপরদিকে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সশস্ত্রযুদ্ধ চলাকালে তিন ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। রাখাইনের বুথিয়াডং এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিহতদের লাশউদ্ধার করা হয়ে। স্থানীয়রা মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে জানিয়েছে, নিহতদের একজন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত। বাকী দুইজন আরাকান সম্প্রদায়ের হলেও তিনজনই ছিলেন নিরস্ত্র। রাখাইনের বুথিয়াডং গ্রামে প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। আরাকান সম্প্রদায়ভুক্তরাও রয়েছে সেখানে। হোপোন নিয়ো লিক এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে ইরাবতীকে জানিয়েছেন, সোমবার সকালে গ্রামবাসী তিন লাশউদ্ধার করে। রবিবার যে এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছিল, লাশগুলো সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল। নিয়ো লিক জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণ রয়েছে। সাম্প্রতিক এসব সহিংসতায় রাখাইনে মারাত্মক নৃতাত্ত্বিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে, যা রাজ্যটিতে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের ক্ষতের জন্ম দিয়েছে। রাখাইনে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এক দশক আগে আরাকান আর্মি গঠিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে তারা শোষিত হচ্ছেন বলে দাবি করছে সংগঠনটি। শুরুর দিকে তাদের অনেক সদস্য রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এসব বৌদ্ধ জেড পাথরের খনিতে কাজ করে ভাগ্য নির্ধারণে উত্তর মিয়ানমারে গিয়েছিলেন। চীনের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তে তাদের জড়ো করে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কাচিন মুক্তি বাহিনী (কেআইএ)। এ সংগঠনটিই অত্র অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সবচেয়ে বড় নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী হচ্ছে কাচিনরা। রাখাইনে ২০২০ সাল নাগাদ একটি বিদ্রোহ উসকে দিতে লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রচারও চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। অনলাইনে ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদ্রোহী তরুণ ও তরুণীরা কুচকাওয়াজ ও মুষ্টিযুদ্ধ চর্চা করছেন। তারা আধুনিক অ্যাসল্ট ও স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়ছেন। আরাকান আর্মির আধ্যাত্মিক নেতা টিওয়ান এমরাট নেয়াংকেও মাঝে মাঝে দেখানো হয়েছে ভিডিওতে। রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন