মঙ্গলবার একনেক সভায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পাস হয়েছে। সরকারের মাদরাসা বান্ধবনীতি এবং মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শুরু থেকেই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবীর সাথে আন্তরিক একাত্মতা প্রকাশ করে তা বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল মন্ত্রী হওয়ার বহু পূর্বে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে প্রথম ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন। এ দেশের মাদরাসা শিক্ষার যথোপযুক্ত মানোন্নয়ন এবং মাদরাসা শিক্ষা সনদের যথার্থ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযাত্রার এই মাইলফলক অগ্রগতির সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং জমিয়াতুল মোদার্ররেছিনের সভাপতিসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বহুল আলোচিত, বহু প্রত্যাশিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মানের জন্য ৪১৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির(একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করেছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান প্রকল্পটি নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। ইতিপূর্বে ২০১৩ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই মূলত: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক অভিযাত্রা শুরু হয়। আলেম সমাজ, মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর তরফে একটি ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী শত বছরের পুরানো। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে দেশের আলেম সমাজ বেশ জোরালো আন্দোলন গড়ে তুললেও লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হতে পারেননি। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারি সবচেয়ে বড় সংগঠন জমিয়াতুল মোর্দারেছিনের সভাপতি হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট দাবীতে নতুন করে যে আন্দোলন গড়ে উঠে বর্তমান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সেই ধারাবাহিক আন্দোলনেরই ফসল। হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নানের সুযোগ্য উত্তরসুরি জমিয়াতুল মোর্দারেছিনের বর্তমান সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এএমএম বাহাউদ্দীনের নিরলস,ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রকল্পটির পেছনে অবদান রয়েছে আমার বন্ধু দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এমএম বাহাউদ্দীনের।’
যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে সামনে রেখে শত বছর আগে আলেম সমাজ ও শিক্ষাবিদরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী তুলেছিলেন সে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা এখনো অটুট রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন এখন জাতীয় উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এখন দেশের মোট শিক্ষার্থীর শতকরা প্রায় ৪০ভাগ মাদরাসায় লেখাপড়া করছে। এ লাখ লাখ মাদরাসা শিক্ষিত জনগোষ্ঠির শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিদেশের শীর্ষ আলেম ও পন্ডিতদের নিয়ে যুগোপযোগি কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবে যাতে মাদরাসা শিক্ষিতরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে কোরআন- হাদীসের আলোকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মানসম্পন্ন সুশিক্ষিত নাগরিক হয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় উদ্যোগ। এতবড় জাতীয় লক্ষ্য অর্জন মাত্র ৪১৩ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্য দিয়েই শেষ হওয়ার নয়। ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হওয়ার পর ইতিমধ্যেই ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। অবকাঠামোগত বাস্তবায়নে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থানে ৪১৩ কোটি টাকায় অবকাঠামো নির্মিত হওয়ার পর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ন ধাপ অতিক্রম করবে। গতানুগতিক ধারার সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যতিক্রমী ও যুগান্তকারি ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে তা’ যেন কোন অহেতুক কালক্ষেপনের নিগঢ়ে বন্দি হয়ে না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকল্পের অর্থছাড় ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের আলেম সমাজের শত বছরের আন্দোলন ও প্রত্যাশার ফসল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে সব ধরনের দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রেখে শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন