শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পুরান ঢাকার সড়কের বেহাল দশা

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খানাখন্দেকে বেহাল আবস্থা রাজধানী প্রায় সব সড়করই। এর মধ্যে দুয়েকটি দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বুজার কোন উপায় থাকে না কোথায় খানখন্দক আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে রোদ উঠলেই বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাসের সাথে ধুলা-বালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সেবদানকারী সংস্থাকে রাস্তা কাটার সীতিম পরিসরে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও এ জন্য রয়েছে কঠোর নিয়ম নীতি। এ নিয়ম নীতি তদারকি করার মূল দায়ীত্বে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার চলমান উন্নয়ন কাজ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের নেই কোন সুনির্দিষ্ট তদারকি। যে কারণে নগরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে এ এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। উঠে গেছে পিচ ঢালাই, খোয়া বেরিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে সড়কগুলো। কাদা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দুই বছরে এ ওয়ার্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ সড়ক সংস্কার কাজে খরচ করা হলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এছাড়াও সড়কের যত্রতত্র আবর্জনার কনটেইনার রাখায় চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেনেজ অব্যবস্থায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন কথা। তিনি জানান, সোয়ারীঘাট থেকে চকবাজারের রাস্তার স্যুয়ারেজ লাইন ও টেকসই ড্রেনেজের কাজ চলমান রয়েছে। আরও অনেক উন্নয়মূলক কাজ করেছেন তিনি।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সোয়ারীঘাট থেকে চকবাজারের মূল সড়কটির আবস্থ একেবারেই বেহাল দশা হয়ে আছে। রাস্তার মাঝখানে ফেলে রাখা হয়েছে স্যুয়ারেজের পাইপ। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
চকবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় ৬ মাস ধরে এ সড়কে কাজ চলছে। কবে যে এ কাজ শেষ হবে তার খবর কেউ বলতে পরে না। তিনি বলেন, এ সড়কের বেহাল দশার কারণে আমাদের ব্যবসারও চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। চকবাজার এলাকা ছোট ছেলে মেয়েদের খেলনা সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের দেশের বড় পাইকারি বাজার হিসেবে বিখ্যাত। অথচ এখন এ বাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ভঙ্গুর দশার কারণে ক্রেতারা আসতেই চায় না।
ওই এলাকার গৃহবধু সালমা ইসলাম বলেন, রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে বাচ্ছাদের স্কুলে পাঠাতেও সমস্যা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই আমাদেরকে ঘরের অন্যান্য কার বন্ধ রেখেই বাচ্ছাদেরকে ইস্কুলে আনা নেয়া করতে হচ্ছে।
এদিকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঢাকার দুই মেয়রকে নগরীর সেবাদানকারী ২৬টি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিটি সংস্থা যে যার মতো করেই কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায়ও রয়েছেন দুই মেয়র। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র জারির পর এ পর্যন্ত দুই সিটি কর্পোরেশন মাত্র দুটি সভা করতে পেরেছে। মেয়ররা বৈঠক ডাকলেও অন্যান্য সংস্থার শীর্ষ বা দায়িত্বশীল কোনও কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি বৈঠকে থাকেন না।
শুধু তাই নয়, পুরান ঢাকার প্রাচীন এ এলাকায় নেই কোনো পার্ক কিংবা খেলার মাঠ, শরীর চর্চা কেন্দ্র। আর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
সোয়ারীঘাটের বাসিন্দা সেলিনা আক্তার জানান, ওয়ার্ডের বাকি রাস্তাগুলো ভালোভাবে কাজ হলে ও সোয়ারী ঘাট থেকে চকবাজার পর্যন্ত রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। এ এলাকার একজন ভোটার হয়ে আমাদের কিছু দাবি তো রয়েছে। ওয়ার্ডে শরীর চর্চার জন্য নেই কোনো জায়গা। এতে আমার মত ডায়াবেটিকস রোগীদের অনেক কষ্ট হয়। এ ধরনের নাগরিক সুবিধা যে কবে পাব তা জানা নেই।
ওয়ার্ডের সার্বিক বিষয়ে দেবীদাসঘাট বড়কাটারা সোয়ারীঘাট চম্পাতলি সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম বাবু জানান, আমাদের ওয়ার্ডে পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, শরীর চর্চা কেন্দ্র নেই। আমরা ডিএসসিসির কাছে নাগরিক সেবার এ অনুষঙ্গগুলো আমাদের এলাকায় চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডিএসসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মোহাম্মদ হাসান পিলু বলেন, ওয়ার্ডের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত দুই বছরে ওয়ার্ডের ১২টি সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়েছে। অন্যান্য নাগরিক সেবার মান উন্নয়নেও কাজ করেছি। তবে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে, সেটা দাবি করছি না। এখনও মাদক, পানি সঙ্কট ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনাসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন