মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ.
১২৮. রবির প্রমাণ স্বয়ং রবি, অন্য প্রমাণ নিরর্থক
তবু প্রমাণ ? সূর্য থেকে ফিরিওনা তোমার চোখ।
১২৯. প্রতিচ্ছায়া প্রমাণ করে সূর্য নভে বিদ্যমান
আসল সুরুজ হর-হামেশা হৃদয় করে জ্যোতিষ্মান।
১৩০. কল্পলোকের রূপকথিকার মতোই ছায়া ঘুম পাড়ায়
উদয় হলে সুরুজ তখন চন্দ্র-আলোক ভয় লুকায়।
১৩১. এই জাগতিক রবির মতো পরবাসী আর তো নাই
প্রাণের রবি প্রাণের নভে দেদীপ্যমান সর্বদাই।
১৩২. সৌরলোকে সূর্য একক, মহাকাশে একক নয়
অসীম সুনীল সুদূর নভে অনেক সুরুজ জ্যোতির্ময়।
১৩৩. প্রাণের রবি এক, অনুপম, ঊর্ধ্বে সকল কল্পনার
বস্তু, জ্ঞেয়, সব জগতের বহির্দেশে আসন তাঁর।
১৩৪. পারতে যদি কল্পনাতেই করতে ধারণ সত্তা তার
পাইতে খুঁজে নযির তাহার, দুর্জ্ঞেয় কি থাকত আর?
১৩৫. এসে গেল কথা যখন শামসুদ্দীন তাবরিজের
মুখ ফেল্ল নিল তখন ‘শামস’ চৌথা আসমানের।
১৩৬. এসে গেল সামনে আমার যখন পুত নামটি তার
বর্তালো দায় তাঁর অবদান, হালও কিছু বর্ণনার।
১৩৭. শ্রবণ-নেশায় আচলটা মোর ধরল কসে প্রাণ আমার
খোশবু যেন পেয়েছে সে, ইউসুফ নবীর সেই জামার।
১৩৮. মন বলে, তাঁর সঙ্গতো ঢের পেলে করো হক আদায়
এবার তাহার হাল-হালতের বয়ান কিছু দাও আমায়।
১৩৯. যেন তাতে দ্যুলোক ভ‚লোক পুলক আভায় দীপ্ত হয়
বুদ্ধি, চোখ ও আত্মা যেন হয় শতগুণ জ্যোতির্ময়।
১৪০. কইনু তারে ক্ষমো রে মন! নিমজ্জিত ফানায় তাই
বুদ্ধি ও জ্ঞান অবশ আমার, তাঁর বাখানির সাধ্য নাই।
১৪১. হুশহারা লোক যাহাই বলুক, ভিত্তি কিছু রয়না তার
সব অমূলক প্রগলভতা ‘বেহুদাবাত’ সব অসার।
১৪২. তোমায় আমি বলব কী আর শিরায় কোনো নেই চেতন
কী বলবো সেই সখার কথা, নেই কোনো যার প্রিয়জন।
১৪৩. বিরহের এই তীব্র জ্বালা, রক্তক্ষরণ অন্তরের
বাড়ছে আরো, আজ রেখে দাও, অন্য সময় বলব ফের।
১৪৪. মন বলে : না, ভ‚খা আমি, শীঘ্র আমায় দাও খাবার
সময় বসে রয়না কভু, তরবারি সে তীক্ষè ধার।
১৪৫. বললো আরো, হে মোর সাথী, তীব্র সূফীর সময় জ্ঞান
‘আজ নহে কাল’ বলা এরূপ তরিকতের নয় বিধান।
১৪৬. তবে তুমি নও কি সুফী, বাকি কেন নগদ নয় ?
বাকির লেনা-দেনায় সদা আসলটাই শূন্য হয়।
১৪৭. মধুর লাগে প্রেমাস্পদের কথা যখন অন্যে কয়
নিজের মনোবাঞ্ছা যখন পরের মুখে ব্যক্ত হয়।
১৪৮. সখার গোপন কথা গোপন রাখাই ভাল মনের মাঝ
গল্প ছলে বলছি তবু, বুঝে নেয়া তোমার কাজ।
১৪৯. বললো, খোলামেলা বলো, লুকোচুরি চাইনা আর
তালবাহানা ঢের হয়েছে এবার খোলো রুদ্ধদ্বার।
১৫০. কইনু তারে, হয় যদি সে নগ্ন রূপে প্রকাশমান
তুমি, তোমার পাশের কিছুই থাকবেনা আর মধ্যিখান।
১৫১. মান ভুলে যাও, পর্দা হটাও, বসন খোলো সময় নেই
প্রিয়ার সাথে বসন গায়ে ঘুম যাবনা কিচ্ছুতেই।
১৫২. চাইবে যা চাও, চাইবেনাকো মাত্রা ছেড়ে আন্দাজের
তৃণ কি ভার বইতে পারে বিশালবপু পর্বতের ?
১৫৩. রবির আলোয় আলোকিত হয় এ ধরা সর্বদাই
আস্লে ধরায় সূর্য নেমে ছাই হবে এ ভুবনটাই।
১৫৪. চেয়োনাকো ফিৎনা-ফাসাদ, হাঙ্গামা ও রক্তধার
শামসে তাবরেযির কাহিনী চেয়োনাকো শুনতে আর।
১৫৫. সেই কাহিনী এমন যে তার নেইকো শুরু, নেইকো শেষ
থাক্ সে কথা, বাদশা-বাদীর কথায় করো মন-নিবেশ।
বাদশা ও বাঁদির কাহিনীর বাকি অংশ
১৫৬. বিজ্ঞহাকিম বুঝতে পারেন আসল ব্যারাম বাঁদির, আর
তেমনি করেন অনুধাবন আকাক্সক্ষাও শাহানশার।
১৫৭. বলেন তিনি, পূর্ণ রূপে বিজন করে দিন এ ঘর
বাঁদি ছাড়া থাকবেনা কেউ এই খানে আর আপন-পর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন